মোমেন আকন্দ (বিশেষ প্রতিনিধি)
২০২৪ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় যে সকল শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে, আজকে তাদের জন্য একটি স্টাডি গাইডলাইন তৈরি করব। বিষয়টি এমন নয় যে, আমার রুটিন মানতেই হবে। শুধুমাত্র যারা কিভাবে পড়তে হবে তা বুঝতে পারছ না, তাদের জন্য আজকের এই রুটিনটি প্রস্তুত করা হচ্ছে। তোমরা অবশ্যই ইতিমধ্যে অবগত আছো যে, ২০২৪ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য কোন সিলেবাস প্রদান করা হয়নি। তারমানে সম্পূর্ণ বই এর উপর পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে। তাই বিগত দু’এক বছরের মধ্যে তোমাদের কষ্টটা একটু বেশি হবে। অন্যান্য বছরের তুলনায় তোমাদের পরিশ্রমটা বেশি করতে হবে। তাই যে কয়দিন সময় তোমাদের হাতে রয়েছে তার যথাযথ ব্যবহার করা উচিত। তবে কিছু করা যাবে না, যে পড়ার জন্য খাওয়া-দাওয়া না ঘুম ঠিকভাবে করা হচ্ছে না। অবশ্যই সঠিক সময় খাওয়া-দাওয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম, ধর্মীয় কাজকর্ম করার পর বাকি সময়টুকু কাজে লাগাতে হবে।
তোমাদের ফোকাস করতে হবে ঘুম থেকে ওঠার পর অর্থাৎ সকালের সময় টুকু। সকালের সময়ে মানুষের ব্রেইন ফ্রেশ থাকে, যার কারণে পড়া মুখস্ত হয় খুব দ্রুত। তাই, সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে নাস্তা করে,ছয়টার মধ্যে পড়তে বসতে হবে। নাস্তা বলতে আমি এটুকুও যাচ্ছি না যে ছয়টার মধ্যেই ভাত কিংবা রুটি খেতে হবে। এ সময়ে বিস্কেট কিংবা অন্য যেকোনো হালকা খাবার খেয়ে পড়তে বসতে পারো। এতে করে ক্ষুধা ভাব থাকবে না। আর অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে, পড়তে বসার আগে হাতের সকল কাজ শেষ করে পড়তে বসা। এতে করে পড়ায় মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে।
রুটিন প্রস্তুতির ক্ষেত্রে, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এমন সাবজেক্ট করতে হবে, যে সাবজেক্ট তোমার কাছে সর্বাপেক্ষা কঠিন মনে হয়। সকালের আবহাওয়া এবং ব্রেন ফ্রেশ থাকা এই দুইয়ের সমন্বয়ে কঠিন সাবজেক্ট টি তুমি সহজেই আয়ত্ত করতে পারবে। যদি সকাল ছয়টা থেকে ৯ টা পর্যন্ত তুমি পড়ো, তাহলে এই তিন ঘন্টা সময়ে তুমি তিনটি সাবজেক্ট পড়বে। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য কঠিন সাবজেক্টের তালিকায় থাকে, ইংরেজি, গণিত, আইসিটি, এবং বিজ্ঞান বিভাগের ক্ষেত্রে উচ্চতর গণিত, পদার্থ, রসায়ন। এই বিষয়গুলোর মধ্যে তোমার কাছে যেগুলো বেশি কঠিন মনে হয়, সকালের তালিকায় এসে সাবজেক্টগুলো আগে পড়বে। তুমি যদি বিজ্ঞান বিভাগের স্টুডেন্ট না হয়ে থাকো, তাহলে অবশ্যই সকালের দিকে ইংরেজি, গণিত, আইসিটি সাবজেক্ট কে প্রাধান্য দিবে। আর বিজ্ঞান বিভাগের স্টুডেন্ট হলে সেক্ষেত্রে পদার্থ, রসায়ন কে স্থান দিতে পারো। এ সময় অনেকেরই ক্লাস, কোচিং কিংবা প্রাইভেট থাকে। সেজন্য আমি প্রোপারলি কোন রুটিন প্রস্তুত করে দিলাম না। আমি যেভাবে প্রোটিন প্রস্তুতির ফর্মুলা দিচ্ছি, এটা অবশ্যই তোমার অফ ডে থাকার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। অফ ডে না থাকলে, ক্লাস, কোচিং কিংবা প্রাইভেট থাকলে সে ক্ষেত্রে নিজেদের মত এডজাস্ট করে নেবে। তবে ক্লাস থাকুক আর না থাকুক, প্রতিদিন প্রত্যেকটা সাবজেক্ট অন্তত কিছুটা সময়ের জন্য হলেও পড়তে হবে। তুলনামূলক কঠিন সাবজেক্টকে বেশি সময় দেবে এবং তুলনামূলক তাদেরকে ফরম সময় দেবে। কিন্তু প্রত্যেকটা সাবজেক্ট কে প্রত্যেকদিন সময় দিতেই হবে। এটা বাধ্যতামূলক। সকালে সময় পড়া শেষ করার পর, যদি ৯ টাই করা শেষ হয়, তাহলে খাওয়া দাওয়া, কিছুটা বিশ্রাম, কিংবা বিনোদন শেষ করে দশ টায় আবার পড়তে বসো। দশটা থেকে বারোটা এই সময়ের মধ্যে সাধারণ সাবজেক্টগুলোকে সময় দাও। বারোটায় পড়া শেষ করে, গোসল, দুপুরের খাওয়া, জোহরের নামাজ শেষ করে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে তিনটার দিকে আবার পড়া শুরু কর। সে ক্ষেত্রে সাধারণ সাবজেক্টের সাথে গণিত রাখতে পারো। দুপুর তিনটায় পড়তে বসলে, বিকাল পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত পড়া কন্টিনিউ করো। তারপর, আসরের নামাজ পড়ে মাইন্ড রিফ্লেক্ট এর জন্য হাটাহাটি এবং বিনোদনমূলক কাজ করতে পারো। মাগরিবের নামাজ শেষ করে কিছু খাওয়া-দাওয়া করে আবার পড়তে বস। এই সময়ে, শুরুর দিকে কঠিন সাবজেক্ট রাখতে পারো। তারপরও ক্রমান্বয়ে সাধারণ সাবজেক্টগুলো পড়তে পারো। লাস্টের দিকে লেখালেখি করে রাত দশটা থেকে ১০:৩০ টার মধ্যে পড়া শেষ। তারপর খাওয়া দাওয়া করে এগারোটার মধ্যে ঘুমিয়ে যাবে। অবশ্যই ঘুম এবং খাওয়া-দাওয়া ঠিক রাখতে হবে। প্রতি এক সপ্তাহ অন্তর অন্তর সকল সাবজেক্টের সমন্বয়ে নিজের একটি পরীক্ষা নেবে।এতে করে নিজের কি কি দুর্বলতা আছে তাও নিজে নিজে বুঝতে পারবে।
পরবর্তী সময়ে তোমাদের জন্য বিজ্ঞান ব্যবসায়ী শিক্ষা এবং মানবিক বিভাগের আলাদা আলাদা স্টাডি রুটিন প্রকাশ করার চেষ্টা করব। আশা করি, এভাবে পড়া কন্টিনিউ করলে অবশ্যই ভালো একটি রেজাল্ট অর্জন করতে পারবে