মোমেন আকন্দ (স্পেশাল রিপোর্টার)
পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় আদালত হচ্ছে মানুষের বিবেকের আদালত। বিবেক যদি সমুন্নত রাখা যায়, তাহলে কোন আদালতের কাছে যেতে হয় না। কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ, কোনটা সঠিক, কোনটা ভুল নিজে থেকেই বুঝা যায়। শত সহস্র ভূল আর সঠিক কাজের সমন্বয়ে প্রতিটি মানুষের জীবন অতিবাহিত হয়। ভূলের পরিমান কারও কম, কারও বেশি। বর্তমান সময়ে ভূল করেনা এমন মানুষের দেখা মেলবেনা হয়তো, কিন্তু ভূল করে নিজের ভুল বুঝতে পারা মানুষের পরিমানও প্রচুর। নিজের ভুল বুঝতে প্রয়োজন সেল্ভ ক্রিটিজম বা আত্মসমালোচনা। সেল্ভ ক্রিটিজম বা আত্মসমালচনা হচ্ছে মানুষের নিজের কৃত কাজ এর সমালোচনা নিজে থেকেই করা। আমরা হর হামেশাই অন্যের কাজগুলো সমালোচনা করে থাকি। কে কতটা ভুল করল কি ভুল করলো সেটা নিয়ে মেতে থাকি। অন্যের সমালোচনা করা কে নিজের দায়িত্ব বলে মনে করি। কিন্তু এই সমালোচনা যদি নিজের উপর করা যায়, তাহলে নিজের বিবেক সমুন্নত হতে বাধ্য। আর বিবেক সমুন্নত হলে আমাদের ব্যক্তিজীবনে ভূলের পরিমান অনেকাংশে কমে আসবে। আমরা সারাদিন এ কি কি কাজ করি, তা অন্তত রাতে ঘুমের আগে কিছুটা সময় সারা দিনে নিজের কৃত কাজগুলো নিয়ে ভাবলেই আমরা নিজের ভুল ধরতে পারব।
হাদিস শরিফে আছে, যেকোনো জ্ঞানী ব্যক্তির জীবনে চার ধরনের সময় থাকা সমীচীন এবং এর একটি হলো সে সময়- যখন তিনি আত্মসমালোচনায় নিয়োজিত থাকেন।অর্থাৎ, সকল জ্ঞানী ব্যক্তি নিজের সমালোচনা নিজে করে থাকেন। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.) বলেছেন, 'শেষ বিচারের দিনে সমালোচনা ও মূল্যায়নের সম্মুখীন হওয়ার আগেই নিজের সমালোচনা ও মূল্যায়ন করো।
অর্থাৎ আমাদের প্রত্যেকের আত্মসমালোচনা করা অত্যাবশ্যক।
বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে চুরি,ছিনতাই, গুম, হত্যা, রাহাজানি, খুন, ইভটিজিং, ধর্ষণ, মাদক, নেশা, জুয়া, সুদ, ঘুষ, জমি জবরদখল, সংখ্যালঘু নির্যাতন, হয়রানীর মত অপরাধ প্রতিনিয়ত ঘটছে। তাছাড়াও আমরা অন্যের ক্ষতি করার নিমিত্তে অনেক কাজই করে থাকি যেগুলো অনুচিত।কিন্তু সেলফ ক্রিটিজম বা আত্মসমালোচনা না থাকার কারণে আমরা আমাদের ভুলগুলো বুঝতে পারি না।বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশে অপরাধ মোকাবেলার জন্য শক্তিশালী পুলিশ বাহিনীর সহ আইনি কাঠমো তৈরি করা আছে। অপরাধীকে শাস্তি স্বরূপ অর্থদণ্ড, কারাদণ্ড কিংবা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। অপরাধ বিবেচনা করে আদালত যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সে অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করা হয়।
কিন্তু, পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় আদালত হল বিবেকের আদালত। পাগল ছাড়া সকলেই এই বিবেকের আদালতের দারস্ত হতে পারে। আমরা কোন একটা কাজ করার আগে যদি ভেবে দেখি কাজটি সঠিক নাকি ভুল, তাহলে আমরা আমাদের ভুলগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো। আর সারাদিনে আমরা কি কি কার্য সম্পাদন করেছি তা যদি ঘুমের আগে আমরা একটু চিন্তা করি,তাহলে আমরা বের করতে পারবো সারাদিনে কি কি ভুল করেছি। এই ভুলগুলো যেন পরের দিন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেদিকে আমরা খেয়াল রাখতে এই ভুলগুলো কমে যাবে। কোন একটা ভুল করে দুনিয়ার আদালতে অপরাধী প্রমাণিত না হয়ে এর আগেই বিবেকের আদালতকে ব্যবহার করে আমাদের সংশোধন হওয়া উচিত। তাহলেই আমরা আমাদের মানসম্মান রক্ষা করতে সক্ষম হব।
বিবেকের আদালতে দোস্ত না হওয়ার কারণে আমরা বিভিন্ন সময় ইচ্ছে,অনিচ্ছায়,প্রকাশ্যে, অপ্রকাশে অনেক অপরাধ করে থাকি। আমরা ফুল করার পরেও যদি দুনিয়াতে বেঁচেও যায়, তবুও আমরা সবাই জানি যে আখেরাতের ময়দানে আমরা কেউ কিন্তু বাঁচতে পারবো না। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত আমাদের বিভাগের আদালতকে সমুন্নত করা এবং প্রত্যেকটা কাজ করার পূর্বে বিবেকের আদালতে দারস্ত হওয়া।
সম্পাদক ও প্রকাশক : ইসমাইল হোসেন সৌরভ,
নির্বাহী সম্পাদক:মো:শাহাবুদ্দিন খান
বার্তা প্রধান : মোহাম্মদ শাহ্ কামাল,
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত