এম আকন্দ (স্পেশাল রিপোর্টার)
পোশাক শ্রমিকদের ন্যায্যমজুরির দাবিতে চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে আজ বৃহস্পতিবার দফায় দফায় সংঘর্ষ সংঘটিত হয়েছে। পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে পোশাক শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছেন। ইতিমধ্যে গার্মেন্টস মালিক সমিতি এবং সরকারের সিদ্ধান্তে পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু এই বেতন মানতে নারাজ পোশাক শ্রমিকরা। এরই ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ি বেসিক এলাকায় আন্দোলন করে তুসকা গার্মেন্টসের শ্রমিকরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনকারীদের কে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কিন্তু ছত্রভঙ্গ হওয়ার পরেও আবার একত্রিত হয়ে তারা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় আন্দোলনকারীরা বিক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের উপরের উৎপাত কেন নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে।আজ দুপুরের পর থেকে কোনাবাড়ী ছাড়াও গাজীপুরের চন্দনা চৌরাস্তা, বাসন, টঙ্গী বেসিক এলাকা সহ গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সাথে পোশাক শ্রমিকদের সংঘর্ষ বাঁধে। এই সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কাজ করেছে বিজিবি ও র্যাবের বিভিন্ন ইউনিট।
এইদিকে ঘোষিত মজুরি কাজে ফেরার জন্য পোশাক শ্রমিকদের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, যা বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে তা নিয়ে কাজ করতে হবে। তারা কাজে ফিরুক। পোশাক শ্রমিকদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখনই সময় আসে তাদের সব রকম সুবিধা আমরা করে দিই। কিন্তু তারা যদি সেটা না করে, কারও প্ররোচনায় রাস্তায় নেমে।এরাই তো যারা উসকানি দিচ্ছে, তারাই তাদের (শ্রমিক) লাশ ফেলবে। এরাই এমন অবস্থা সৃষ্টি করবে যাতে তারা চাকরি হারাবে, কাজ হারাবে, গ্রামে গিয়ে পড়ে থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এখন তারা কী চায়? কারখানা ধ্বংস হয়ে গেলে উৎপাদন ব্যাহত হয়, রপ্তানি ব্যাহত হয়, তাহলে তাদের কাজ থাকবে কোথায়? এটা তো তাদের বুঝতে হবে। আর উসকানিদাতা কারা?’
শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিতে আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে ১ হাজার ৬০০ টাকা মজুরি থেকে ৮ হাজার ৩০০ টাকা তাদের মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর বর্তমানে আবার সেটা বৃদ্ধি করে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। আবার প্রতিবছরে ৫ শতাংশ করে বৃদ্ধি হয়।
মূল্যস্ফীতির কারণে বেতন বাড়ানোর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে। পোশাকশ্রমিকদের বেতন ৫৬ শতাংশ বাড়ানো হলো। যে কারখানা তাদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে, তাদের খাদ্য দেয়, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে; সেই কারখানায় হামলা, পোড়ানো, ধ্বংস করা। ১৯টি কারখানায় আক্রমণ করে ধ্বংস করা হয়েছে।’
পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমি পোশাকশ্রমিকদের কথা একটু বলি। আজকে তাদেরকে রাস্তায় নামানো হয়েছে। আমার কাছে খবর আছে, তাদের (শ্রমিক) এইভাবে রাস্তায় নামাবে এবং ওরাই তাদের এজেন্ট ঢুকাবে, ওদের ক্ষতি করবে, দরকার হলে লাশ ফেলবে এবং দেশের অবস্থা আরও অস্থিতিশীল করবে। অনেক জায়গায় অনেক কিছু চেষ্টা করে যখন পারেনি, তখন এই কাণ্ডটা।’
সম্পাদক ও প্রকাশক : ইসমাইল হোসেন সৌরভ,
নির্বাহী সম্পাদক:মো:শাহাবুদ্দিন খান
বার্তা প্রধান : মোহাম্মদ শাহ্ কামাল,
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত