মোঃ শফিয়ার রহমান পাইকগাছা খুলনা বিশেষ প্রতিনিধ
খুলনা ৬ আসনের হেভিওয়েট প্রার্থীদের চমক দেখিয়ে নৌকার মাঝি হলেন মোঃ রশিদুজ্জামান মোড়ল। পাইকগাছা আওয়ামী লীগে দীর্ঘদিন কোনঠাসা হয়েও হাল না ছেড়ে দলের জন্য কাজ করে যাওয়া ইউপি চেয়ারম্যান থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান অতঃপর আওয়ামীলীগের নৌকার মাঝি হলেন তিনি। টানা কয়েকবার পাইকগাছা উপজেলার ২ নং কপিলমুনি ইউপির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এর পর পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করার জন্য এর পর দল থেকে বহিষ্কার অতঃপর বহিষ্কার প্রত্যার করা হয়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে পাইকগাছা-কয়রার হেভিওয়েট প্রার্থীদের নাম শোনা গেলেও এমপি প্রার্থী হিসেবে কোথাও পোস্টর, ব্যানার বা গনসংযোগ পযন্ত করেনি মোঃ রশিদুজ্জামান মোড়ল। বরং জেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ ইন্জিনিয়ার মাহবুবুল আলম এমপি প্রার্থীর প্রচারণায় অংশ নিয়ে ভোট চেয়েছেন। রবিবার আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নৌকার মাঝিদের নাম যখন ঘোষণা করেন, তখনও কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি মোঃ রশিদুজ্জামান মোড়ল নৌকার টিকিট পেয়েছেন। নামের কিছুটা মিল থাকায় সাবেক এমপি পুত্র শেখ মোঃ রাশেদুল ইসলাম রাসেলের নাম সৌশাল মিডিয়ায় অভিনন্দনে ভরে যায়। কিন্তু ঘন্টা খানেক পর ক্লিয়ার হয়ে যায় মোঃ রশিদুজ্জামান মোড়ল নৌকার মাঝি হয়েছেন। এসময় তার জন্মস্থান আগড়ঘআটা বাজার থেকে আনন্দ মিছিল বের হয়ে উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে মনোনয়ন বঞ্চিত আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন চলছে। তবে এই বিষয়ে কথা বললে কয়েক জন এটি প্রতিবেদকে জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে,প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে সবুজ সংকেত পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে আবেদন করবেন।
কে এই মোঃ রশিদুজ্জামান মোড়ল।
বাম রাজনীতি থেকে শুরু করে হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সময়ের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক সদস্য সচিব মো. রশীদুজ্জামান দীর্ঘ দিন দলের মধ্যে কোনঠাসা হয়েছিলেন। তারপরও দলীয় মনোনয়ন পেতে দীর্ঘদিন তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করেছেন আওয়ামী রাজনীতির এই ত্যাগী নেতা। সেটা বিবেচনায় নিয়ে দল থেকে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তার মনোনয়নের খবরে নির্বাচনী এলাকার দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। রবিবার সন্ধ্যায় পাইকগাছা-কয়রার বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।
জানাগেছে, ছাত্র জীবন থেকে গণমানুষের অধিকার আদায়ে স্বোচ্চার এই নেতা আশির দশক থেকে অপরিকল্পিত ও পরিবেশ বিধ্বংসী চিংড়ি চাষ বিরোধী আন্দোলন করে পরিচিতি পান। বারবার পুলিশ ও প্রভাবশালী মহলের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। কয়েকবার জেলও খেটেছেন। এরপরও বারবার কপিলমুনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরআগে ১৯৯০ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হলেও সেই বিজয়ী ছিনিয়ে নেয় তৎকালীণ স্বৈরশাসক এরশাদ।
সাবেক ছাত্র নেতা মো. রশীদুজ্জামান ১৯৮১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর পরই স্বৈরাচার বিরোধী-আন্দোলনে ছাত্রঐক্য পরিষদের ব্যানারে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তৎকালীন স্বৈরাচার সরকার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ১৯৮৩ সালে সামরিক জান্তার হাতে গ্রেফতার হয়ে শারীরিক নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে কারাবরণ করেন তিনি। তিনি অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার প্রবেশ পত্র আদালতে দেখিয়ে জামিন নিয়েছিলেন। এম.এ. পরীক্ষার পূর্বে আবারো তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৮৭ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনের সঙ্গে আরো তিনটা মামলা যোগ করে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা। দীর্ঘদিন এই মেয়াদে জেল খাটতে হয়। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ মো. নূরুল হকের পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা করায় সারাদেশে রাজনৈতিক বিপর্যয়ের পর তার গোটা পরিবারের ওপর চারদলীয় জোটের দ্বারা অবর্ণনীয় নির্যাতন ও হয়রানি শিকার হয়। ২০০৬ সাল পর্যন্ত ডজনখানেক মামলা মোকাবেলা করতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখা-পড়া, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি নিজ এলাকায় কৃষকদের জমি লবণ পানি মুক্ত রাখার জন্য ঘের মালিকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন মাটি ও মানুষের নেতা রশীদুজ্জামান। আশির দশকে খুলনা জেলার যে সকল এলাকায় চিংড়ি চাষ শুরু হয়েছিল, সেই সকল ব্যাপক এলাকার মানুষদের সংগঠিত করে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। এজন্য তাকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। শারীরিক নির্যাতনসহ বহু মামলা মোকাবেলা করতে হয়েছে। দিনের পর দিন কারাগারে থাকতে হয়েছে। কিন্তু সেই আন্দোলন সফল হয়েছে। আক্রান্ত সেই সকল এলাকায় এখন ধান, তরমুজ ও সবজি চাষ করে এলাকার জনগণ ব্যাপক লাভবান হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা শেষ করে এলাকায় ফিরে রাজনীতিতে সময় দেওয়ার জন্য চাকরির প্রত্যাশা করিনি সাহসী তরুণ নেতা রশীদুজ্জামান। এলাকায় পড়ে থেকে রাজনীতি ও সামাজিক কাজেই সময় দিয়েছেন তিনি। খুঁজে খুঁজে অনেক সম্ভাবনাময় যুবকদের সংগঠিত করে দলে সম্পৃক্ত করেছেন। যে কারণে অতীতে ওই আসনে আওয়ামী লীগ বিরোধী প্রার্থীরা বিজয়ী হলেও বর্তমানের চিত্র উল্টো। জননেত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্ব এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত প্রার্থীরা যেকোনো নির্বাচনে বিজয়ী হন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : ইসমাইল হোসেন সৌরভ,
নির্বাহী সম্পাদক:মো:শাহাবুদ্দিন খান
বার্তা প্রধান : মোহাম্মদ শাহ্ কামাল,
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত