নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রতিবছরই গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করে আওয়ামী লীগ। মাঠ পর্যায়ের জরিপে যাদের জনপ্রিয়তা ও ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বেশি তাদেরই মনোনয়ন দেয়া হয়। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে ভিন্ন কৌশলে হেঁটেছিল দলটি। প্রথাগত গোয়েন্দা সংস্থা বাদ দিয়ে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর গোপন প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ২৯৮ আসনে প্রার্থী দিয়েছে দলটি। জরিপে স্বচ্ছতা বজায় রাখতেই এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত জানুয়ারিতে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর নতুন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক দায়িত্ব নেয়ার পরেই এই গোয়েন্দা প্রতিবেদন তৈরির কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের মার্চ থেকে প্রতিটি রেঞ্জ, জেলা ও উপজেলা আনসার কমান্ড্যান্টদের আসনভিত্তিক রিপোর্ট তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে গোপনীয়তা রক্ষায় জরিপ কাজে ভিডিপি’র কোনো সাধারণ সদস্যকে রাখা হয়নি। তাদের জরিপের বিষয়টি অবগতও করা হয়নি। এ কাজে শুধুমাত্র উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ডিডি, এডি ও টিআইদের ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি আসনের তথ্য সংগ্রহ করে ভিডিপি’র জেলা কমান্ড্যান্টে জমা দেয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
পরে তা আনসার সদরদপ্তরে পাঠানো হয়। গত মার্চ থেকে প্রতিটি আসন ঘুরে ঘুরে এই জরিপ করেন আনসার অফিসাররা। দীর্ঘ ৮ মাস ধরে চালানো জরিপের ফলাফল গেল নভেম্বরে জমা দেয়া হয়। সেই প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করেই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করে আওয়ামী লীগ।
সূত্র জানায়, প্রতিটি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের দলীয় কর্মকাণ্ড, কর্মীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, জনপ্রিয়তা, দলের প্রতি আনুগত্যতা, দলের জন্য পরিবারের ভূমিকা, সেবামূলক ও জন উন্নয়নে কী ভূমিকা, দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি, গ্রুপিং, পদপদবিতে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি এই তথ্য তুলে আনা হয়। বিভাগভিত্তিক ৩ ধাপে এই গোয়েন্দা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। জরিপে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে মাঠে কাজ করা অফিসারদের নজরদারি করতে আলাদা একটি বিশেষ ইউনিট নিয়োগ করা হয়। ওই ইউনিট জরিপকারীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের কাজ করেন। কে কখন কোথায় যান, কার সঙ্গে কথা বলেন তাও প্রত্যক্ষ করা হয় এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগেও গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়।
এ ব্যাপারে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক বলেন, এটা সত্য যে আমরা মাঠ পার্যায়ে একটি জরিপ চালিয়েছি। সম্ভাব্য প্রার্থী ও ভোটারদের অভিমত জানার চেষ্টা করেছি। জরিপে শতভাগ সত্য তথ্য তুলে আনা হয়েছে। আনসার বাহিনী এই প্রথম এমন কোনো জরিপ কাজে অংশ নিয়েছে। তবে আমি নিশ্চিত নই, যে আমাদের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ২৯৮ আসনে প্রার্থী দেয়া হয়েছে। এই বিষয়ে আমার কাছে কোনো সঠিক তথ্য নেই। আমরা শুধু আমাদের কাজ করেছি। এখন কোন রিপোর্টের ওপর নির্ভর করে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, সেটা আমাদের জানার বিষয় না। জানার চেষ্টাও করিনি।
আনসার বাহিনীর একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই রেঞ্জ ও জেলা আনসার কমান্ড্যান্টরা প্রতিটি উপজেলা ঘুরে ঘুরে উপজেলা কমান্ডার ও দলনেতাদের সঙ্গে মিটিং করে। মিটিংয়ে নির্বাচনে আনসার সদস্যদের ভূমিকা কী হবে তা রোস্টার আকারে বুঝিয়ে দেন। এখনো উপজেলা টিআই’রা প্রতিটি ইউনিয়নে গিয়ে নিয়মিত মিটিং করছেন এবং ভোটের কর্মপরিকল্পনার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এমন দু’টি উপজেলা কেরানীগঞ্জ ও নরসিংদী পলাশের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মাস ডিসেম্বরের ৫ তারিখ থেকে গ্রাম পর্যায়ে কর্মরত আনসার সদস্যরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রাইমারি স্কুলগুলোতে নির্বাচনী পূর্ব প্রস্তুতিমূলক সভা করছেন। কিছু কিছু সভায় স্কুলের শিক্ষক ও সাধারণ মানুষকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। ওই সভায় ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে নানা কর্মপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। কীভাবে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো যায় এ বিষয়ে সভায় আগতরা নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। সেই মতামত লিপিবদ্ধ করে উপজেলায় পাঠানো হচ্ছে। উপজেলা থেকে জেলা, রেঞ্জ ঘুরে তা সদরদপ্তরে পাঠানো হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রায়পুর উপজেলা আনসার ব্যারাকের এক সদস্য বলেন, আমরা এখন থেকেই ভোটারদের ভোটকেন্দ্র আসতে নানান পরামর্শ দিচ্ছি। ভোট দিতে উদ্বুুদ্ধ করছি। এমনকি ভোটারদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়া হচ্ছে। এজন্য কিছু কিছু জায়গায় কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে। জেলা থেকে আমাদের নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। সেই মোতাবেক স্যাররা আমাদের কাজে লাগাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, গত ২১শে ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সারা দেশে আনসার ভিডিপি’র ক্যাম্পগুলোতে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে রিটার্নিং অফিসার বরাবর আবেদন করতে নির্ধারিত ফরম পাঠানো হয়েছে। এই আবেদন ফরম ৩ দিনের মধ্যে পূরণ করতে বলা হয়েছে। বাহিনীর ৬১ লাখ সদস্যের কাছে এই আবেদনপত্র পাঠানো হয়। সূত্র জানায়, বুধবার থেকে ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পোস্টাল ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। শুক্রবার প্রতিটি ব্যারাক ও ক্যাম্পের সদস্যদের শনিবার থেকে আবেদন ও বুধবার থেকে পোস্টাল ব্যালটে ভোটাধিকার প্রয়োগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ২৮শে ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষ করে ডাকযোগে তা সদস্যদের নির্ধারিত উপজেলা নির্বাচন অফিসে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক এক আনসার সদস্য বলেন, গত বৃহস্পতিবার আমাদের ক্যাম্পে পোস্টাল ভোটের আবেদন ফরম এসেছে। শুক্রবার ক্যাম্পের প্রতিটি রুমে রুমে হ্যান্ডমাইক দিয়ে ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার থেকে আবেদন ফরম পূরণ ও বুধবার থেকে ভোট দিতে হবে।
নির্বাচন নিয়ে যে পরিকল্পনায় আনসার-
গত ৪ঠা ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই প্রত্যেক জেলার আনসার কমান্ড্যান্ট ও ৯টি বিভাগীয় রেঞ্জ কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেন আনসার ভিডিপি’র মহাপরিচালক এ কে এম আমিনুল হক।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা আনসার ভিডিপি’র এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকটি অতি গোপনীয় ছিল। এতে সর্বনিম্ন জেলা পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদের ডাকা হয়। আসন্ন নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনাই ছিল বৈঠকের প্রধান আলোচ্য
সম্পাদক ও প্রকাশক : ইসমাইল হোসেন সৌরভ,
নির্বাহী সম্পাদক:মো:শাহাবুদ্দিন খান
বার্তা প্রধান : মোহাম্মদ শাহ্ কামাল,
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত