এম জাফরান হারুন, পটুয়াখালী::
পটুয়াখালীর বাউফলে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশ মেয়র গ্রুপ প্যানেল থেকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনি বিভিন্ন গণসংযোগ ও পথসভায় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাউফল পৌর মেয়র মোঃ জিয়াউল হক জুয়েল বারবার তার বক্তব্যে বলেছিলেন এবার নির্বাচনে’ খেলা হবে ‘। তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশ এমপি গ্রুপ প্যানেলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন বিভিন্ন পথসভা ও উঠান বৈঠকে ‘ খেলা হবে ‘ ওই বক্তব্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তারা বলেছিলেন এবার নির্বাচনে ‘ খেলব ‘, খেলা যেহেতু হবে আমরাও খেলব। তাই নির্বাচনে খেলেই দিল এমপি গ্রুপ প্যানেল।
বিপুল ভোটের ব্যবধানে সংসদ সদস্য আসম ফিরোজ এমপি গ্রুপ প্যানেলের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ ভাইস-চেয়ারম্যান মোঃ মোসারেফ হোসেন খান আনারস মার্কা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, আর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক) মোঃ আনিচুর রহমান উড়োজাহাজ মার্কা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান এবং মোসাঃ মরিয়ম আক্তার নিশু হাসঁ মার্কা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তারা বিজয়ী হয়ে জয়ের মালা পড়ে উপজেলা পরিষদের মাতা-পিতা হয়ে গেছেন।
তবে গত ২১ শে মে-২০২৪ ইং তারিখ অনুষ্ঠিত হওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশ মেয়র গ্রুপ প্যানেলের। মেয়র গ্রুপ প্যানেলের ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব হাওলাদার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে ঘোড়া মার্কা প্রতীক, ভাইস-চেয়ারম্যান পদে তালা মার্কা প্রতীক নিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ রাহাত জামশেদ ও মহিলা-ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রজাপতি মার্কা প্রতীক নিয়ে এডভোকেট ঝরনা বেগম।
গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ফলাফল ঘোষণা করেন উপজেলা নির্বাচন ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহীন শরীফ। এতে দেখা যায়, চেয়ারম্যান পদে মোসারেফ হোসেন খান (আনারস) ৪২ হাজার ৩২৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুল মোতালেব হাওলাদার (ঘোড়া) পেয়েছেন ৩০ হাজার ১০১ ভোট। অপর দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী মশিউর লাবলু (কাপ-পিরিচ) পেয়েছেন ১৪ হাজার ৫৫০ ভোট, দোয়াত কলম প্রতীকের সজল হালদার পেয়েছেন ৩ হাজার ৬৪৫ ভোট।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে উড়োজাহাজ প্রতীকে আনিসুর রহমান ৫০ হাজার ৫০৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মাহমুদ রাহাত জামশেদ (তালা) পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৭১৪ ভোট। আর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মরিয়ম বেগম হাঁস প্রতীকে ৫০ হাজার ৩৭১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঝরনা বেগম (প্রজাপতি) পেয়েছেন ৩৮ হাজার ৮৫২ ভোট। ২ লাখ ৯৭ হাজার ৬০৭ ভোটারের মধ্যে ৯৪ হাজার ৮৩২ জন ভোট দিয়েছেন। প্রাপ্ত ভোটের হার ৩১ শতাংশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন যে, সংসদ সদস্য আসম ফিরোজ এমপি গ্রুপ একাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন এবং ইউনিয়ন থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ে যে কমিটি বা সংগঠন আছে তা শক্তিশালী বা বিশ্বাস্ত। ওই প্যানেলের পক্ষে কাজ করেন এমপির অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা এমপির হাতকে আরও শক্তিশালী করতে এমটাই উপহার দিয়েছেন।
অপরদিকে এমপি গ্রুপ প্যানেলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পাল্টা প্যানেল নিয়ে মাঠে নামেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাউফল পৌর মেয়র মোঃ জিয়াউল হক জুয়েল। ওই প্যানেলের পক্ষে কাজ করেন মেয়র অনুসারী আওয়ামী লীগের নেতারা। যা নড়েবরে। তাই তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত ভোট না পেয়ে বিপুল পরিমাণ ভোটে পরাজয় বরন করতে হয়েছে।