নিজস্ব প্রতিবেদক:
জীবনের সফলতা কখনো হঠাৎ এসে পড়ে না, আসে ধৈর্য, পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাসের ধারাবাহিক চর্চায়। এমনই এক অনুপ্রেরণার নাম মো. হিমেল মিয়া—বর্তমানে ৪১তম বিসিএসের মাধ্যমে তথ্য (সাধারন) ক্যাডারে, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে কর্মরত।
কিশোরগঞ্জ জেলার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া হিমেলের গল্প একেবারেই সাধারণ হলেও, তার পথচলা অনন্য। শিক্ষাজীবন শুরু হয় কিশোরগঞ্জ থেকে, আর উচ্চশিক্ষার গন্তব্য ছিল বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এখানেই তিনি ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ থেকে স্নাতক (বিবিএ) ও স্নাতকোত্তর (এমবিএ) সম্পন্ন করেন হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট থেকে।
২০২২ সালের অক্টোবর মাসে তিনি জনতা ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে যোগদান করেন, যা ছিল তার প্রথম চাকরি। ব্যাংকে কর্মরত অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (BIBM) আয়োজিত ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং সম্মিলিত মেধাতালিকায় সারা দেশে স্বর্ণপদক অর্জন করেন—যা তার প্রতিভা ও নিষ্ঠার চূড়ান্ত স্বীকৃতি।
তবে হিমেল শুধু এখানেই থেমে থাকেননি। তিনি তার মূল স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ৪১তম বিসিএসে তথ্য (সাধারন) ক্যাডারে ও ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। একাডেমিক পড়াশুনার সাথে সামঞ্জস্য থাকায় তার চূড়ান্ত ইচ্ছা ছিলো বিসিএস প্রশাসন।
অতঃপর, সর্বশেষ ৩০ জুন ২০২৫ তারিখে ৪৪তম বিসিএসের প্রকাশিত ফলাফলে প্রশাসন ক্যাডারে ৯৭তম হয়ে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হন, যা তার স্বপ্নপূরণের পথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
হিমেল বলেন, “চূড়ান্ত সফলতার মুখ দেখার আগ পর্যন্ত একটা বিষয় আমাকে বারবার ভাবিয়েছে—এই সমাজে আজো অনেক জায়গায় ‘পড়াশোনার’ চেয়ে ‘টাকা-পয়সার’ গুরুত্ব বেশি।
আমার উচ্চশিক্ষা ছিল, আমার স্বপ্ন ছিল, আমার চেষ্টা ছিল—কিন্তু সব জায়গায় যেন তার ওজন কম, যদি পকেটে টাকার ভার না থাকে। কিছু মানুষ এমনভাবে বুঝিয়েছে যেন টাকা না থাকলে মেধার দাম নেই। তবু আমি হাল ছাড়িনি। আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে সময় লেগেছে, ধৈর্য ধরতে হয়েছে। সেই সময়টাই আমাকে মানুষ করেছে, শিখিয়েছে”।
“আজকে আব্বা বেঁচে থাকলে উনিই সব থেকে বেশি খুশি হতেন। জীবনের সকল অর্জনের পেছনে কেনো জানি এই মানুষটার কাছে নিজেকে সবচেয়ে বেশি ঋণী মনে হয়। নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েছেন, নিজের সবটুকু দিয়েছেন। বিনিময় দেয়ার ভাগ্য হয়নি কখনো। সেটা আবার একদিকে ভালো, তার কাছে সবসময় ঋণী থাকা যাবে। আমার আম্মা শুধু দুয়া করেন। কেনো জানি আমাকে নিয়ে তার করা কোনো দুয়াই বিফলে যায়নি। গতকাল রেজাল্টের কথা শুনে নাকি উনার খুশিতে রাতে ঘুম আসেনি। ভাই বোনের কথা আর নাই বললাম। যেকোনো সময়ে সবাই এক হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা সবচেয়ে বেশি শক্তি জুগিয়েছে।
কতো নির্ঘুম স্বপ্নের রাত কাটিয়েছি, কিন্তু সবসময় পাশে ছিলো দুই তিনটা বন্ধুরুপী ভাই। এরা ঐসময়টা পাশে না থাকলে বোধহয় হারিয়ে যেতাম।
জীবনে সফলতা পাওয়ার অনেক আগেই জীবনসঙ্গিনী হয়েছিলো সে। এক কথায় বলতে গেলে, এই সকল "12th Fail" সিনেমার কাহিনী তার কীর্তির সামনে খুবই মামুলি হবে। আমার ছোট্ট মেয়েটা আমার জীবনে মনে হয় পরশপাথর হয়েই এসেছে (আলহামদুলিল্লাহ)।
সত্যি বলতে কি, রেজাল্টের খবরে যতটা না খুশি হয়েছি তার থেকে বেশি খুশি হয়েছি এই সকল মানুষগুলোর খুশি দেখে। জানিনা শেষ পর্যন্ত কি করবো!!! আপনাদের সকলের কাছে দোয়া চাই।”
তার এই যাত্রাপথ শুধু তার নিজের নয়, বরং দেশের হাজারো তরুণ-তরুণীর জন্য একটি শক্তিশালী প্রেরণা।
সম্পাদক ও প্রকাশক : ইসমাইল হোসেন সৌরভ,
নির্বাহী সম্পাদক:মো:শাহাবুদ্দিন খান
বার্তা প্রধান : মোহাম্মদ শাহ্ কামাল,
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত