নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর কলাবাগানে পৈতৃক সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায় তাসলিমা আক্তার (৪২) নামে এক নারীকে হত্যার পর তার লাশ ডিপ ফ্রিজে লুকিয়ে রাখার মতো চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে স্বামী নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এই নৃশংস ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম (৫২) পলাতক রয়েছেন।
সোমবার রাতে কলাবাগানের একটি বাসা থেকে পুলিশ হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহত তাসলিমার ছোট ভাই নাঈম হোসেন বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার এজাহার ও নিহতের পরিবারের ভাষ্যমতে, গাজীপুরের পূবাইলে তাসলিমার পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১০ কাঠা জমি নিজের নামে লিখে দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চাপ দিচ্ছিলেন স্বামী নজরুল ইসলাম। তাসলিমার পরিবার এতে রাজি না হওয়ায় তাদের মধ্যে কলহ চরম আকার ধারণ করে। নজরুল তার স্ত্রীকে প্রায়ই শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন এবং গত কয়েক মাস ধরে তাকে একরকম গৃহবন্দী করে রেখেছিলেন। এমনকি তাসলিমাকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দিতেন না এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন।
হত্যাকাণ্ড যেভাবে প্রকাশ পায়
নিহতের বড় ভাই নাজমুল হোসেন জানান, সোমবার সকালে নজরুল তার দুই মেয়েকে জানায়, তাদের মা অন্য পুরুষের সঙ্গে পালিয়ে গেছে। এরপর সে মেয়েদেরকে তাদের ফুফুর বাসায় রেখে আসে। পরে বড় মেয়ে তার বাবার কক্ষে রক্ত দেখতে পেয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে এবং বিষয়টি তাদের ফুফুকে জানায়।
খবর পেয়ে নাজমুল হোসেন গাজীপুর থেকে ঢাকায় এসে ভাগ্নিদের নিয়ে কলাবাগান থানায় যান। পুলিশ এসে বাসার দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। দীর্ঘক্ষণ খোঁজাখুঁজির পরও কাউকে না পেয়ে অবশেষে ডিপ ফ্রিজ খুললে মাছ-মাংসের স্তূপের নিচে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় তাসলিমার মরদেহ দেখতে পাওয়া যায়।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন আগে নজরুল তার শ্বশুর-শাশুড়িকে ঢাকায় ডেকে এনে পূর্বের দুর্ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন, যা একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের ইঙ্গিত বহন করে বলে পরিবার মনে করছে।
কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফজলে আশিক জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, "পারিবারিক কলহের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে একটি মামলা (মামলা নং-৩) দায়ের করেছেন। প্রধান আসামি নজরুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন এবং তাকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। তাকে গ্রেপ্তার করা গেলেই ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটিত হবে।"
নিহতের পরিবার এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য নজরুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে। ২০০৪ সালে পারিবারিকভাবে নজরুল ও তাসলিমার বিয়ে হয়েছিল। তাদের সংসারে তিন কন্যা সন্তান রয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : ইসমাইল হোসেন সৌরভ,
নির্বাহী সম্পাদক:মো:শাহাবুদ্দিন খান
বার্তা প্রধান : মোহাম্মদ শাহ্ কামাল,
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত