নিজস্ব প্রতিবেদক:
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে এমবিবিএস ও সনোলজিস্ট পরিচয় দিয়ে রোগী দেখা এবং আল্ট্রাসনোগ্রাফি করার অভিযোগ উঠেছে শাহরিয়ার আহমেদ নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের দাবি, শাহরিয়ার প্রায় ১০–১১ বছর ধরে ভুয়া পরিচয়ে চিকিৎসাসেবা দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করে আসছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যশোর জেলার নওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা বলে পরিচয় দেওয়া শাহরিয়ার আহমেদের সঠিক ঠিকানা, পরিচয় কিংবা পরিচিতজনদের সম্পর্কে কোনো তথ্য স্থানীয়দের জানা নেই। অভিযোগ রয়েছে খুলনা বা অন্য কোনো এলাকায় কম্পাউন্ডারি করতে করতে প্রেসক্রিপশন লেখা শিখে এবং মাত্র তিন মাসের আল্ট্রাসনো কোর্স করে তিনি কলারোয়ায় আসেন। এরপর থেকেই নিজেকে MBBS ডাক্তার ও সনোলজিস্ট পরিচয় দিয়ে রোগী দেখা ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি শুরু করেন।
কয়েক বছর আগে কলারোয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তৎকালীন টিএইচও ডা. মাহবুবর রহমান (সান্টু) শাহরিয়ারকে তলব করে তার নিবন্ধন নম্বর চাইলে তিনি তা দেখাতে ব্যর্থ হন।
গুগলে “Verify Doctor” সার্চ করে যে কোনো এমবিবিএস চিকিৎসকের BMDC নম্বর যাচাই করা যায় কিন্তু শাহরিয়ার আহমেদের নামে কোনো রেজিস্ট্রেশন পাওয়া যায়নি।
পরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা একাডেমিক কাগজপত্র চাইলে শাহরিয়া ভারতের পাটনার একটি কথিত মেডিকেল কলেজের নামে জাল সনদপত্র তৈরি করে নিয়ে আসে। কর্মকর্তা কাগজপত্র যাচাই করে সেগুলোকে ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং শাস্তিস্বরূপ তাকে হাসপাতাল এলাকা থেকে বহিষ্কার করেন।
বহিষ্কারের পরও শাহরিয়ার কিছু ল্যাব মালিকদের সহযোগিতায় গোপনে চিকিৎসা ও আল্ট্রাসনো চালিয়ে যেতে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে—ল্যাব মালিকরা একজন প্রকৃত এমবিবিএস চিকিৎসকের চেয়ে ভুয়া ডাক্তার দিয়ে আল্ট্রাসনো করিয়ে বেশি লাভ করেন।
ফলে রোগীদের জানানো হয় না যে যিনি আল্ট্রাসনো করছেন তিনি এমবিবিএস নয়।
একাধিকবার পুলিশ ও ডিবি অভিযানে গেলেও মালিকদের সহায়তায় সে আগেই খবর পেয়ে আত্মগোপনে চলে যেত বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে।
স্থানীয় অভিযোগকারী জানান, বর্তমানে তদারকির অভাব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উদাসীনতার কারণে শাহরিয়ার আহমেদ আবারও প্রকাশ্যে চেম্বার চালাচ্ছেন। তিনি কলারোয়া হাসপাতাল রোডের হাসান ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক, ডক্টরস ল্যাব, নোভা ডিজিটাল, স্টার প্যাথোলজি, ই-ল্যাব, সুরক্ষা ডায়াগনস্টিক, শেফা ডায়াগনস্টিক, মুন্না ডায়াগনস্টিক, মিতালি ডায়াগনস্টিক এবং ইসমাইল ক্লিনিক (শেখ আমানুল্লাহ কলেজ রোড) ও মাতৃসেবা ক্লিনিকে রোগী দেখা ও আল্ট্রাসনো করছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, কলারোয়ায় পর্যাপ্ত MBBS ডাক্তার ও সনোলজিস্ট থাকা সত্ত্বেও অধিক মুনাফার জন্য ল্যাব মালিকরা নিবন্ধনবিহীন ব্যক্তিকে দিয়ে আল্ট্রাসনো করাচ্ছেন। অথচ আইন অনুযায়ী আল্ট্রাসনোগ্রাফি একটি চিকিৎসাবিষয়ক কার্যক্রম, যা কেবলমাত্র একজন BMDC অনুমোদিত এমবিবিএস ডাক্তারই করতে পারেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় একজন সচেতন নাগরিক সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগে জানান, “এত অনিয়মের পরও স্থানীয় পর্যায়ে অভিযোগ দিলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে সাধারণ রোগীরা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে।”
তিনি বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন, যাতে ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষ ভুয়া চিকিৎসকের চিকিৎসায় প্রতারিত না হয় এবং নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা পায়।তদন্তে ভুয়া ডাক্তার সনাক্ত হওয়ার পরেও শাহরিয়ারকে আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের তেমন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
সম্পাদক ও প্রকাশক : ইসমাইল হোসেন সৌরভ,
নির্বাহী সম্পাদক:মো:শাহাবুদ্দিন খান
বার্তা প্রধান : মোহাম্মদ শাহ্ কামাল,
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত