নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকায় অক্সিজেনের বড় আধার মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বা বোটানিক্যাল গার্ডেন। যার উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষা গবেষণা ও উদ্ভিদ সংরক্ষণে কাজ করা। তবে সবকিছু থেকে অনেকটা দূরে রয়েছে এ উদ্যান। শিক্ষা গবেষণা দূরে থাক, উদ্যানটি রীতিমতো পরিণত হয়েছে অশ্লীলতা আর মাদকের ভূস্বর্গে। এমন কার্যক্রম বন্ধে কর্তৃপক্ষের রয়েছে উদাসীনতা। শুধু উদ্যান জুড়ে রয়েছে দায়সারা সচেতনতামূলক প্রচারণা।
মিরপুরের ওই উদ্যানটি এখন রাজধানীর সেক্স প্লেস হিসেবে পরিচিতি পেয়ে গেছে। বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রবেশপথ থেকে একটি সোজা পাকা সড়ক চলে গেছে উদ্যান কর্তৃপক্ষের অফিস পর্যন্ত। প্রবেশদ্বার থেকে কয়েক পা এগোলে পাকা সড়কের পূর্ব পাশ দিয়ে একেবারে উত্তরের শেষ মাথা পর্যন্ত লেকের পাড় দিয়ে অসংখ্য ঝোপঝাড়। ওই সব ঝোপঝাড়ের আড়ালে জোড়ায় জোড়ায় কপোত কপোতী। শুধু এখানেই নয়, উদ্যান কর্তৃপক্ষের অফিসের পেছনে, পদ্মপুকুর পাড়ে ওরা আছে সব খানে। কোন ঝোপঝাড়ের দিকে প্রবেশাধিকার নেই সাধারণ দর্শনার্থীদের। ওদিকে যেতে চাইলে বাধা। বাঁশের ছোট ছোট চিকন লাঠি হাতে পাঁচ-সাত জন করে যুবক দাঁড়িয়ে। ওরা পাহারাদার। হাতের লাঠি হচ্ছে ওদের পরিচিতি।লাঠি হাতে দেখলে বুঝে নিতে হবে ওরা উদ্যান ইজারাদারের নিয়োজিত লোক। পুরো উদ্যানে লাঠি হাতে ওদের সংখ্যা পঞ্চাশ থেকে ষাট জন। ওদের কাজ গার্ডেনের দর্শনার্থীদের নিরপাত্তা বিধান করা, যাতে কেউ উদ্যানে গিয়ে প্রতারণার কবলে বা ছিনতাইয়ের কবলে না পড়ে। সরজমিন বোটানিক্যাল গার্ডেন ঘুরে দেখা গেল লাঠি হাতে ওই বাহিনী। পাঁচ-সাত জনের গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ঝোপঝাড় এলাকায় বিশেষ দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা বিধানে ব্যস্ত।
শুধু তাই না এই উদ্যানে টাকার বিনিময়ে নিরাপত্তাকর্মীরা সমকামিতার ও সুযোগ করে দেয় মো: আব্দুল্লাহ আল কাওছার নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায় যে তিনি তার বন্ধু সাইফুল ইসলাম শাহীন কে নিয়ে এই পার্কে সময় কাটানোর জন্য এসেছে এবং ওই অবস্থায় স্থানীয় মুফতির কাছে ধরা পড়লে মুফতি সাহেব পুলিশকে ইনফর্ম করলে তাহারা বলেন দুইজন বিয়ে করেছেন যাহা বাংলাদেশি আইন অনুযায়ী অবৈধ ও অনৈতিক কাজ। পরবর্তীতে স্থানীয় কমিশনারের কাছে মুচলেকা দিয়ে চলে যান, এরকম হাজার হাজার ছেলে ছেলে ও মেয়ে মেয়ে এই উদ্যানে অনৈতিক কাজে লিপ্ত।
উদ্যানের ভেতরে সাইনবোর্ডে অশ্লীলতা পরিহার করার কথা বললেও ভেতরে ঠিকই তা চলে। জানা গেছে, উদ্যানের ভেতরে প্রতি দুজন ছেলেমেয়েকে বিশেষ ব্যবস্থায় সময় কাটানোর ব্যবস্থা করে দিতে জায়গাভেদে নেওয়া হয় ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা। যেখানে সাধারণভাবে ভেতরে প্রবেশ করতে লাগত ২০ টাকা। অন্যদিকে শরীরচর্চায় উদ্যানে যেতে ছিল না কোনো ধরাবাঁধা সময়। বছরপ্রতি করতে হতো ১ হাজার টাকার কার্ড। তবে সব নিয়ম পাল্টে গেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে
সূত্রমতে, প্রতি বছর টেন্ডারের মাধ্যমে ইজারাদার নির্বাচন করা হয়। যাদের কাছে নির্ধারিত অর্থের বিনিময়ে হস্তান্তর করা হয় টিকিট বিক্রির প্রক্রিয়া। পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বারবার মেসার্স সাগর এন্টারপ্রাইজ নামের একই প্রতিষ্ঠান ইজারা পেয়ে থাকে এ টিকিট বিক্রির।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি ইজারাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাগর এন্টারপ্রাইজের কাউকে।
মিরপুরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘শরীরচর্চা করতে আমাদের নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে সারা দিন অশালীন কর্মকা-কে প্রমোট করে সেখান থেকে বাড়তি আয় করে সংশ্লিষ্টরা। তাই শরীরচর্চাকারীদের ফ্রেমে আটকে রাখতে চাচ্ছে তারা। এ ছাড়া সাধারণ মানুষ এত টাকা দিয়ে ভেতরে যাবে না। যারা অসামাজিক কাজ করতে আসে, তারা ১০০ টাকা নয়, এর বাইরেও টাকা দিয়ে যাবে।’
মিরপুর-১-এ থাকা আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘বার্ষিক কার্ড করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা দিতে পারেনি। উল্টো বলল ৫০০ টাকার কার্ড নিতে, যা দিয়ে সকাল ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত থাকা যাবে উদ্যানে। অথচ আমি আমার সন্তানকে স্কুলে দিয়ে ৮টায় ব্যায়াম করতে যেতাম। কিন্তু এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া বিকেলে যারা ব্যায়াম করেন তারা কোনো কার্ড পাচ্ছেন না। উল্টো কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিদিন ১০০ টাকা দিয়ে ব্যায়াম করতে হবে।’
এদিকে দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে জানা গেছে, বোটানিক্যাল গার্ডেনের গহিন অংশে ছেলেমেয়েদের বিশেষ মুহূর্তে কাটানোর ব্যবস্থা করে অর্থ আদায় করা হয়। এ ছাড়া উদ্যানে কাজ করা কর্মীরা নারীসঙ্গী সাপ্লাইও দিয়ে থাকে। উদ্যানের ভেতরে রয়েছে দোকানপাট। যেখানে খাবারের পাশাপাশি রয়েছে ধূমপানের ব্যবস্থা। যদিও কাগুজে নিয়ম অনুযায়ী উদ্যানে ধূমপান এমনকি আগুন সম্পর্কিত কিছুই ব্যবহার করবার সুযোগ নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম পরে উদ্যানে প্রবেশের অনুমতি না থাকলেও সবই চলছে এখানে। কেউ এ নিয়ে কথা বলতে গেলে উল্টো আনসার দিয়ে ভয় দেখানোরও চেষ্টা করা হয়। অন্যদিকে উদ্যানের ভেতরে বেশ কিছু পকেটগেট রয়েছে, যা দিয়ে মাদক সেবন ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটে।
উদ্যানের এমন পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় শওকত ইমরান আরাফাতের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। সবকিছুতেই পরিবর্তন আসবে। শুধু একটু সময় প্রয়োজন। দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদন আমাদের নজরে এসেছে। অশ্লীলতা বন্ধ করতে দ্রুতই উদ্যানে সিসি ক্যামেরা লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমরা চিহ্নিত করা শুরু করেছি কারা এগুলোর সঙ্গে যুক্ত। যারাই যুক্ত হবে তাদের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।
এ ব্যপারে প্রশাসন এবং সচেতন সমাজ দ্রুত ব্যাবস্থা না নিলে এই মনোরম উদ্যানটি তার নিজস্ব ঐতিহ্য হারিয়ে স্থায়ী ভাবে রাজধানীর সেক্স প্লেস হিসেবে পরিচিতি পাবে ।