নিজস্ব প্রতিবেদক:
কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার ঘোড়াউত্রা নদীতে মাছ ধরার সময় এক সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী পলাশ দাস দাবি করেছেন, এটি কেবল একটি সহিংস ঘটনা নয়, বরং দীর্ঘদিনের ধর্মীয় ও সামাজিক বৈষম্যের ধারাবাহিক প্রতিফলন।
২০২২ সালের ১০ নভেম্বর, পলাশ দাস ও তার পিতা শম্ভু দাস নদীতে মাছ ধরতে গেলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেম ও তার সহযোগী আরজু মিয়া, সোহেল, মমিনসহ আরও কয়েকজন ব্যক্তি লাঠিসোটা নিয়ে তাদের উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। হামলায় পলাশ ও তার পিতা গুরুতর আহত হন।
চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ:
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বাজিতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরিবারটি দাবি করেছে, অভিযুক্তদের প্রভাবের কারণে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে তারা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন। পরে তারা একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এ বিষয়ে উপজেলা সিভিল সার্জনের মন্তব্য জানতে চাইলেও তিনি সাড়া দেননি।
আহতরা বাজিতপুর থানায় মামলা করতে গেলে অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন পলাশ দাস। পরবর্তীতে তারা আদালতের শরণাপন্ন হন। মামলা করার পর থেকেই পরিবারটি অব্যাহত হুমকি এবং নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। পলাশ দাস বলেন, “আমাদের বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে।”
সম্পত্তি বিরোধ ও ধর্মীয় নিপীড়ন:
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ও তার ঘনিষ্ঠরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকার প্রায় ১৫-২০টি সংখ্যালঘু পরিবারের উপর সামাজিক ও ধর্মীয় নিপীড়ন চালিয়ে আসছেন। নদীর পাশের জমি দখলের জন্য পরিকল্পিতভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বসতভিটা ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিক্রিয়া:
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কিশোরগঞ্জ শাখার এক প্রতিনিধি বলেন, “এই অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ। যেকোনো আইনি বা সামাজিক প্রতিবাদ করলেই তাদের প্রতিশোধের মুখোমুখি হতে হয়।”
চেয়ারম্যান ও পুলিশের অবস্থান:
এই বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য দেননি। বাজিতপুর থানার এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, “বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন, তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করা যাচ্ছে না।”
বর্তমান অবস্থা:
ভুক্তভোগী পরিবারটি বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন। পলাশ দাস জানান, “আমরা কোথাও নিরাপদ নই। একদিকে ধর্মীয় পরিচয়, অন্যদিকে স্থানীয় প্রভাবশালীদের রোষ—আমাদের বাঁচার পথ বন্ধ করে দিয়েছে।”