শরিফুল ইসলাম, মোহনপুর প্রতিবেদকঃ
রাজশাহীর মোহনপুরে শিগগিরই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে জাতিয় শ্রেষ্ঠ শিক্ষক রাখাল চন্দ্র দাসের ‘সর্ববৃহৎ ম্যুরাল’।মোহনপুর উপজেলা পরিষদের সূত্রে জানা যায়,মোহনপুর উপজেলার (সরকারি স্কুলের গেটের পাশে ) নির্মিত রাখাল বাবুর এই ম্যুরালটি হবে দেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ রাখাল বাবু ম্যুরাল। ম্যুরালটি উদ্বোধনের পর স্থানটি রাখাল চত্ত্বর হিসেবে ঘোষণার জন্য স্থানীয় বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে। জন্মস্থান বাগমারা হলেও
মোহনপুর প্রখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন শ্রী রাখাল চন্দ্র দাশ।
শ্রী রাখাল চন্দ্র দাশের জন্ম
৩১-০৩-১৯৩২ সালে এবং মৃত্যু ২০০৩ সালের ২৩ শে এপ্রিল।
শিক্ষক। অসাম্প্রদায়িক সমাজকর্মী এবং
শ্রী রাখাল চন্দ্র দাশ ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। পেশায় ছিলেন একজন নিবেদিত প্রান শিক্ষক। শিক্ষার আলোয় তুলেছেন বহু আলোকিত মানুষ।
উদ্ভাসিত করেছেন অনেকের জীবন। গড়েছেন অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্টান। মোহনপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম এর উদ্যোগে। পার্শবর্তী বাগমারা উপজেলার শংকরপৈই- সৈয়দপুর গ্রামে ৩১ মার্চ ১৯৩২ সালে জন্মানো প্রখ্যাত এই ব্যাক্তির মৃত্যুর পরে তাঁর স্বরণে নিজ অর্থায়নে ম্যুরালটি স্থাপন করে অনেকটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম। এর আগে চলতি বছরের ১১ মার্চ (ডাক নাম) বাবু রাখালচন্দ্র দাশের ম্যুরাল নির্মানের ভিত্তিপ্রস্থর উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী এমপি, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন এমপি।
বাবু রাখালচন্দ্র দাশ নিজ এলাকা বাগমারা ছাড়াও মোহনপুরে তিনি শিক্ষার আলো ছড়িয়েছেন। গড়ে তুলেছেন বহু আলোকিত মানুষ। মোহানপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও একই উপজেলার বাকশিমইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক বাবু রাখালচন্দ্র দাশ ১৯৮৯ সালে জাতীয় শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্বে। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এই সংগঠক একই উপজেলায় পরপর দুটি সুনামধন্য উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে ২০০৩ সালের ২৩ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। বাবু রাখাল চন্দ্র দাশ একাধারে শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধার সংগঠক ও বহু শিক্ষা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। বাগমারা ও মোহনপুর উপজেলায় এসব শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তিনি ১৯৯১ সালে তৎকালীন (বাগমারা -মোহনপুর) আসনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচন করে পরাজিত হন।
সম্প্রতি বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে গরীব শিশুদের লেখাপড়া ও অসহায়দের বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য রাখাল দাশ চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র ও বিদ্যানিকেতনের নতুন ভবন নির্মাণ করেন তাঁর ছেলেরা। বাবু রাখালচন্দ্র দাশের তিন ছেলে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি মেডিকেলের স্কিন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা: পরাগ দাশ, আমেরিকার লামার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কুমার পিয়াল দাশ ও বাগমারা উপজেলার মচমইল ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ পতিক দাশ।
নবনির্মিত ভবনটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক বলেছেন, প্রয়াত রাখাল বাবুর আর্দশ ও চেতনা লালন করতে হবে। তিনি যেভাবে শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে গেছেন নতুন প্রজন্মকেও সেভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তাঁকে মনে-প্রাণে ধারণ করতে হবে তাহলেই এই প্রয়াস স্বার্থক হবে।
রাখালচন্দ্র দাশের স্বরণে এডভোকেট আব্দুস সালাম বলেন, রাখাল বাবু ছিলেন আওয়ামী লীগের বটবৃক্ষ। সেই বটবৃক্ষ ও জাতীয় অন্যতম শিক্ষকের ম্যুরাল আমরা দৃশ্যমান করেছি। আমরা জাতির জনকের সৈনিক, বঙ্গবন্ধুর কন্যার সৈনিক। আমরা স্থানীয়ভাবে মোহনপুরের আওয়ামী লীগ রাখাল বাবুর নির্দেশিত পথে আজও পর্যন্ত আমরা আওয়ামী লীগ করে যাচ্ছি। আমরা তাঁর স্বরণে ম্যুরালটি স্থাপন করেছি।
উল্লেখ্য, ম্যুরালটি স্থাপনের জায়গার মাধিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেন এক ব্যাক্তি। জমিটি মামলায় উল্লেখিত তপশিলভুক্ত না হওয়ায় সে মামলাটি নিন্ম আদালতে খারিজ হয়ে যায়। এরপর মামলার বাদি উচ্চ আদালতে আপিল করলে মামলার আসামীদের ২৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন আদালত। ম্যুরালটির স্থাপক এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম জানান, উপজেলা দলীয় কার্যালয়ের সাথে লাগিয়ে জেলা পরিষদের জায়গায় ম্যুরালটি স্থাপন করা হয়েছে।