এম জাফরান হারুন, নিজস্ব প্রতিবেদক, পটুয়াখালী::
পটুয়াখালীর পল্লীগ্রাম থেকে অচিরে হারিয়ে যাচ্ছে বেতগাছ, সেই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে বেতফলও।
বেত গাছের ফলকে বেতফল, বেত্তুন, বেথুন, বেথুল, বেতুল, বেতগুলা, বেতগুটি, বেত্তুইন ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। সম্প্রতি বেতগাছের বৈজ্ঞানিক নাম Calamus tenuis, যা Arecaceae গ্রাম বাংলার পরিবারভুক্ত। তবে এটি বাংলাদেশ, ভুটান, কম্বোডিয়া, লাওস, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ভারত, জাভা ও সুমাত্রা অঞ্চলের উদ্ভিদ জঙ্গলের গাছ ৷
সাধারণত বেতগাছে ফুল আসে আশ্বিন-কার্তিক মাসে। আর ফল পাকে চৈত্র, বৈশাখ এবং জ্যৈষ্ঠ মাসে। এটি অপ্রচলিত ফল হলেও ছোট বড় অনেকের কাছে খুবই প্রিয়। এ ফলকে গ্রামবাংলায় বেতফল বা বেতুন বলে খুবই পরিচিত। এটি যেমন পুষ্টিকর তেমন সুস্বাদু ও ওষুধিগুণ সমৃদ্ধ। মূলত মাটির অবস্থা ভেদে এ ফল খুব মিষ্টি হয়। আবার স্থান ভেদে একটু টকও হয়। বেতফল মরিচ দিয়ে চাটনি করে খেতে খুব মজাদার পাকা বেতফল এমনিতেই খেতে দারুণ সুস্বাদু।
এক সময় গ্রামের কৃষকের অতি প্রয়োজনীয় গাছ হিসেবে পরিচিত ছিল এই বেতগাছ। বেত দিয়ে বিভিন্ন হস্তশিল্প যেমন চেয়ার, টেবিল, মোড়া, ডালা, কুলা, চাঙ্গারি, ঢুষি, হাতপাখা, চালোন, টোকা, গোলা, ডোল, ডুলা, আউড়ি, চাঁচ, ধামা, পাতি, বই রাখার তাক, সোফা, দোলনা, খাট, ঝুড়ি, টেবিল ল্যাম্প, ল্যাম্পশেড ইত্যাদি কারো শিল্প তৈরি করা হত। এটি গৃহ নির্মাণ কাজেও ব্যবহার হয়। বিশেষ করে রেস্তোরাঁ বা অফিসের শৌখিন পার্টিশন হিসেবে এর ব্যাপক ব্যবহার ও রয়েছে। এ ছাড়া লম্বা বেত ফালা করে নানা কিছু বাঁধার কাজেও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কালের আবর্তে মানুষ তার প্রয়োজনে ঝোপ-ঝাড়ের সংখ্যা কমিয়ে ফেলেছে।,
স্থানীয় বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক বছর আগেও পটুয়াখালীর বিভিন্ন হাটবাজারে কৃষকরা বেত বিক্রি করার জন্য আসতেন। একটি ২০-২২ হাত লম্বা বেত আগে বিক্রি হতো ২০ থেকে ২৫ টাকায়। কিন্তু আজ সে বেত ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দিলেও পাওয়া যাচ্ছে না।
পটুয়াখালী, রাঙ্গাবালী, গলাচিপা ও কলাপাড়া উপজেলা ভাবলাতলার গ্রামের বাসিন্দা মোঃ রাশিদ উদ্দিন, আব্দুর রহিম ও সাকুর মাহমুদ সহ বাউফল উপজেলার সদর ইউনিয়নের শেখ মোঃ খোরশেদ আলম বলেন, গত কয়েক বছর আগেও আমাদের বাড়ির আশে পাশে ঝোপজার আঙ্গিনাসহ গ্রামের বিভিন্ন পরিত্যক্ত স্থানে বেত গাছের প্রচুর বাগান দেখেছি। কিন্তু এসবের চাহিদা কমে যাওয়ায় আজ এ বাগানগুলো আর দেখা যায় না। শহরায়ন ও নগরায়নের কারণে আজ মানুষ এসব বাগান উজাড় করে ফেলেছে।
তবে আমরা ছোটবেলায় দেখেছি বেতফল গোলাকার বা একটু লম্বাটে গোলাকার, ছোট ও কষযুক্ত টকমিষ্টি এর খোসা শক্ত হলেও ভেতরটা নরম বীজ শক্ত।
তবে কাঁচা ফল সবুজ ও পাকলে সবুজাভ ঘিয়ে বা সাদা রঙের হয়। এটি থোকায় থোকায় ঘনবসতি ফলে। প্রতি থোকায় প্রায় ২০০টি পর্যন্ত ফল হয়। বেতগাছে ফুল আসে অক্টোবর মাসে আর ফল পাকে মার্চ-এপ্রিল মাসে। এটি অপ্রচলিত ফল হলেও অনেকের কাছে খুবই প্রিয় ও সুস্বাদু ছিল ৷
সাধারণত বেতগাছ চিকন, লম্বা, কাঁটাময় ও খুবই শক্ত প্রকৃতির। এটি জঙ্গলাকীর্ন কাঁটা ঝোপ জঙ্গল আকারে জন্মে।
পটুয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, বেত এক সময় গ্রামীণ ঐতিহ্য জনজীবনের দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্র তৈরির অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল শহুরে জীবনেও বেতের তৈরি জিনিসপত্র আভিজাত্যের প্রতীক। কিন্তু বর্তমানে মানুষ তার প্রয়োজনে ঝোঁপ-ঝাড়ের সংখ্যা কমিয়ে ফেলেছে। যার ফলে হারিয়ে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বেতফল ও গাছ ৷