ইমরান বিন অহেদ:
যাবতীয় প্রশংসা মহান আল্লাহর, যিনি নারী ও পুরুষ—উভয়কে সৃষ্টি করেছেন, এবং নারীদের করেছেন কোমল, স্নিগ্ধ ও সৌন্দর্যমণ্ডিত এক অনন্য সত্তা। এই কোমলতা, ভালোবাসা ও অনুরাগ মূলত পুরুষের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযাত্রার জন্যই নির্ধারিত।
কিন্তু যদি আমরা ইতিহাসে ফিরে তাকাই, নবীজির আগমনের পূর্বে জাহিলিয়াতের অন্ধকার যুগে নারী ছিল অবহেলার প্রতীক। তখন নারীর প্রতি সৌহার্দ্য, সম্মান কিংবা ভালোবাসার কোনো স্থান ছিল না। সেই অমানবিক পরিস্থিতিতে আল্লাহ দয়া করলেন, পাঠালেন মানবতার শ্রেষ্ঠ আদর্শ হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কে, যাঁর মাধ্যমেই নারীরা ফিরে পেলো হারানো সম্মান ও মর্যাদা। ইসলাম নারীকে দিয়েছে উত্তরাধিকারের অধিকার, মায়ের পদতলে জান্নাত, এবং পুরুষের জীবনে চার গুরুত্বপূর্ণ রূপ—মা, স্ত্রী, বোন ও কন্যা হিসেবে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েও নারী অধিকারের নামে এমন কিছু দাবি সামনে আসছে, যা ইসলামী মূল্যবোধ ও সামাজিক নীতির সঙ্গে স্পষ্টভাবে সাংঘর্ষিক। সম্প্রতি আলোচিত “নারী সংস্কার কমিশন”-এর কিছু সুপারিশ গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পতিতাবৃত্তিকে “পেশা” হিসেবে বৈধতা দেওয়ার মতো প্রস্তাব, যা সামাজিক অবক্ষয় এবং নৈতিক সংকট ডেকে আনতে পারে।
প্রশ্ন আসে—একটি অবৈধ কাজকে বৈধতা দিলে তা কি আরও বিস্তৃত হবে না? মাদকদ্রব্য বৈধ করলে যেমন মাদকসেবীর সংখ্যা বেড়ে যায়, তেমনি পতিতাবৃত্তির বৈধতা দিলে সমাজে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও মূল্যবোধে নেমে আসবে ধস। এর সঙ্গে বাড়তে পারে এইডস, PTSD, মানবপাচারসহ নানা সামাজিক সমস্যা।
আবার, উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে “নারী অর্ধেক পায়—এটা বৈষম্য”—এই অভিযোগও সামনে এসেছে। অথচ ইসলাম এখানে স্পষ্ট করে বলেছে, পুরুষ পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্বে নিয়োজিত, নারীর নয়। নারী যেটুকু উত্তরাধিকার পান, তা তাঁর একান্ত সম্পদ—কারও সঙ্গে ভাগ করতে হয় না।
এছাড়া বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে কিছু প্রস্তাবনা এসেছে, যেখানে স্ত্রীর অনিচ্ছায় শারীরিক সম্পর্ককে “ধর্ষণ” হিসেবে চিহ্নিত করার দাবি তোলা হয়েছে। ইসলাম বিবাহকে একটি সম্মানজনক চুক্তি ও পারস্পরিক অধিকারভিত্তিক সম্পর্ক হিসেবে দেখে, যেখানে একে অপরের প্রতি দায়িত্ব, শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতা আবশ্যক। রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করে।” (তিরমিজি)
এসব বিতর্কিত প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে সমাজে নারী-পুরুষের পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্মানের সম্পর্কের বদলে তৈরি হবে প্রতিপক্ষতা ও বিভাজন। আমাদের উচিত হবে নারী-অধিকারকে ধর্মীয় ও নৈতিক কাঠামোর মধ্যে রেখে উন্নয়নের পথ খোঁজা, যেন সমাজে ভারসাম্য ও মূল্যবোধ বজায় থাকে।
পরিশেষে বলবো, নারীর মর্যাদা ও অধিকার ইসলামই সর্বপ্রথম নিশ্চিত করেছে। সেই আলোকে আমাদের সংস্কারও হওয়া উচিত—আলোকে ফিরতে নয়, অন্ধকারে ঠেলে দিতে নয়।
— — —
লেখক: জাওয়াদ আবদুল্লাহ
ঠিকানা : জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ মিরপুর ঢাকা.