শাহাদাত হোসেন রুবেলঃ
বরিশাল সরকারি বিএম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিলাস মল্লিক ও প্রভাষক মুক্তা বেগমের বিদেশে উচ্চশিক্ষার্থে আয়োজিত বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। কলেজের পরীক্ষা ভবনে সকাল ১১ টায় এই আয়োজন শুরু হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।
অনুষ্ঠানটি প্রভাষক নুসরাত বেগমের সঞ্চালনায় শুরুতেই কোরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর দুই শিক্ষককে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
সহকারী অধ্যাপক বিলাস মল্লিককে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান মাহফুজা বেগম এবং প্রভাষক মুক্তা বেগমকে শুভেচ্ছা জানান প্রভাষক মাইনুল ইসলাম।
এছাড়াও বিভাগীয় প্রধান ড. মো. ইব্রাহীম খলিল স্যারকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান মাহফুজা বেগম।
বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দুইজন গুণী শিক্ষকের স্মৃতিচারণ ও মানপত্র পাঠ করে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৩৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী বৈশাখী।
বৈশাখী তার মানপত্রে উল্লেখ করে “দুইজন শিক্ষক আমাদের পাঠদানে যেমন ছিলেন নিষ্ঠাবান, তেমনি মানবিকতায়ও ছিলেন অনন্য। আজ বিদায়ের ক্ষণে আমার চোখ অশ্রুসিক্ত।”
এছাড়াও বক্তব্য দেয় ৩৪ তম ব্যাচের তামিম,
৩২ তম ব্যাচের শ্রাবন্তি,
৩১ তম ব্যাচের রফিকুল ইসলাম,
২৬ তম ব্যাচের নুরুল আমিন, ২৮ তম ব্যাচের তোহা ও ২৪ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন রুবেল।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য প্রদান করেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অন্যান্য সহকর্মীবৃন্দ।
প্রভাষক মাইনুল ইসলাম বলেন, “আলো আর অন্ধকারের এই জীবনে, বিলাস মল্লিক ও মুক্তা বেগম ছিলেন আমাদের জীবনের আলোকবর্তিকা। তারা ছিলেন বিএম কলেজের দুটি উজ্জ্বল নক্ষত্র।”
মাহফুজা বেগম তার বক্তব্যে আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, “মুক্তা বেগম আমার বিভাগের ছোট বোন। তার জীবনদর্শন, ইতিবাচক মনোভাব এবং মেধা তাকে এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে। আমরা গর্বিত।”
নিজের বক্তব্যে সংবর্ধিত প্রভাষক মুক্তা বেগম বলেন, “আমার এই সাফল্য সহজ ছিল না। অষ্টম শ্রেণিতে থাকতেই আমার বিয়ের কথা চলছিল। কিন্তু আমার মা ছিলেন আমার ঢাল। আমি সাইক্লোন সেন্টার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এসেছি নিজের চেষ্টায়। এক শিক্ষক বলেছিলেন, ‘সবাই পারলে তুমি কেন পারবে না?’ সেই কথাই আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমি জেন্ডার ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করতে চেয়েছি সবসময়। বিদায়ের আগে যদি কারও মনে কষ্ট দিয়ে থাকি, ক্ষমা করে দেবেন। তোমরা সবাই দেশের গর্ব হও।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. শেখ মো. তাজুল ইসলাম বলেন, “এই বিদায়ী অনুষ্ঠান তখনই সফল হবে যখন তোমরা স্যারদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেরাও উচ্চশিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন দেখবে। আজকের এই শুভক্ষণ আমাদের গর্বের, কারণ আমাদের শিক্ষকরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছেন।”
সবশেষে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বলেন, “এই আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দু আমাদের দুই উজ্জ্বল নক্ষত্র—বিলাস মল্লিক ও মুক্তা বেগম। তারা যাচ্ছেন স্বপ্নপূরণ করতে, যা আমাদের গর্ব। তবে তাদের অভাবও আমরা তীব্রভাবে অনুভব করব। আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা শুধু সার্টিফিকেট নয়, মানুষ হয়ে গড়ে উঠুক।”
এই বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বি এম কলেজের ইতিহাসে কান্না, স্মৃতি আর শুভ কামনায় পরিপূর্ণ এক নতুন অধ্যায় রচিত হল।