রাজশাহী , তানোর প্রতিনিধি: গোলাম রাব্বানী (সফল)।
রাজশাহীতে তানোরে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির দলীয় কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে রয়েছে। গত রমজান মাসে নিজ দলের দুই কর্মীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মামলা ও সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কারাদেশ এবং আহ্বায়ক কমিটির কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর থেকেই এ স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। দুই ঈদ পার হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো সভা-সমাবেশ কিংবা সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখা যায়নি। যদিও মাঝখানে মুন্ডুমালা পৌর বিএনপির প্রয়াত নেতা আজহার মাস্টারের মৃত্যুতে শোকসভা এবং তানোর উপজেলা মিলনায়তনে এক দিনের পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
দীর্ঘ সময় দলীয় কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকার কারণে তানোর বিএনপি ভেতরে ভেতরে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এই বিভক্তি ও স্থবিরতার মূল কারণ হিসেবে নেতাকর্মীরা সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিজানের বহিষ্কারাদেশকেই দায়ী করছেন। তৃণমূল নেতাদের মতে, “তানোর বিএনপি মানেই মিজান।” তাঁর উপস্থিতি নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরিয়ে আনে। তাই তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতি দাবি উঠেছে, মিজানের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে দলকে দ্রুত সুসংগঠিত করতে হবে। তাঁদের মতে, মিজান ছাড়া তানোরে বিএনপি কার্যকর কোনো অবস্থানে যেতে পারবে না।
দলীয় সূত্র জানায়, গত রমজানে পাঁচন্দর ইউনিয়ন বিএনপির ইফতার মাহফিলে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিজান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিনকে বরণকে কেন্দ্র করে ইউপি বিএনপির সাবেক চেয়ারম্যান মমিনুল হক মমিন ও বর্তমান সভাপতি প্রভাষক মজিবুর রহমানের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে মমিনের ভাই বিএনপি কর্মী গানিউল আহত হয়ে পরে মারা যান। এই ঘটনায় মিজান, মজিবুরসহ তাদের অনুসারীদের নামে মামলা হয়। যদিও মিজান মঞ্চে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, তবুও তাঁকে মামলায় আসামি করা হয়। এরপর কেন্দ্রীয় নির্দেশে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি থেকে মিজান ও মজিবুরকে বহিষ্কার করা হয়। বিষয়টি তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন তোফা বলেন, মিজান স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সাহসী নেতা। বিগত সময়ে মেয়র থাকা অবস্থায় তাঁকে ৭০ কেজি চাল চুরির মিথ্যা মামলায় জেলে যেতে হয়। তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজনীতি করেছেন। কোটা আন্দোলনের সময়েও তাঁকে জেলে যেতে হয়েছিল। অথচ এমন একজন নির্যাতিত নেতাকে বহিষ্কার করা দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অযৌক্তিক।
পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুব মোল্লা বলেন, তানোরের সাতটি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভার নেতাকর্মীরা একাধিক সভা করে মিজানের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। কারণ মিজান ছাড়া তানোর বিএনপি কার্যত অচল। বিভক্ত বিএনপিকে এক কাতারে আনতে মিজান ছাড়া অন্য কাউকে যোগ্য মনে করছেন না তৃণমূল ও সিনিয়র নেতারা।
পাঁচন্দর ইউপির সাবেক সম্পাদক ও সহকারী অধ্যাপক মফিজ উদ্দিন বলেন, মিজান তানোর বিএনপির ‘আইকন’। তিনি ছাড়া দলে ঐক্য ফিরবে না। আগাম নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে দলকে সুসংগঠিত করতে হলে কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটিকে তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে।
সাবেক কাউন্সিলর আবু সাঈদ বাবু ও আব্দুল মান্নান বলেন, মিজানের নেতৃত্বে অতীতে বহু আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে। তাই দলে ঐক্য ফেরাতে তাঁর ফিরে আসা জরুরি।
চাঁন্দুড়িয়া ইউপির সভাপতি আজাদ ও সম্পাদক সাজ্জাদ বলেন, মিজান তানোর বিএনপির `বটবৃক্ষ`। তাঁর ছায়াতলে সবাই রাজনীতি করতে চান। অথচ তাঁকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার করে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বহিষ্কারের পর থেকে দলে সংকট কাটছে না।