শাহাদাত হোসেন রুবেলঃ
সভাপতি ও অধ্যক্ষের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে এক মাদ্রাসায় দুই জন অধ্যক্ষ দায়িত্ব পালন করছেন।
একজন পূর্ব থেকে দায়িত্ব পালন করছেন ও আরেকজন সহকারি অধ্যাপক কে সভাপতি দায়িত্ব দিয়েছেন।
দুই অধ্যক্ষই দাবি করছেন তারা বৈধ। এমনই চিত্র দেখা গেছে বরিশালের হিজলা উপজেলার ধুলখোলা ইউনিয়নের আলীগঞ্জ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসায়।
তাহলে কে আসল অধ্যক্ষ? এমনই প্রশ্ন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,
অধ্যক্ষ কক্ষে বসে দায়িত্ব পালন করছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ রুহুল আমিন কামাল। পাশেই বসা নিয়মিত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আব্দুল গাফফার আনসারী।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রুহুল আমিন কামাল মুঠোফোনে সাংবাদিকদের বলেন,আবদুল গাফফার আনছারী তিনি তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সাবেক সাংসদ পংকজ নাথ ও হিজলা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে হওয়া একটি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছেন। নিয়মিত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আমার মামলা রয়েছে সে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমি-ই দায়িত্ব পালন করে যাবো। তবে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে বরখাস্ত করে ইউএনও সাহেবকে জানানো হয়েছে।
তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এবং সাবেক সাংসদের আস্থাভাজন ব্যক্তি, তিনি তার দাপট খাটিয়ে দীর্ঘদিন প্রভাব বিস্তার করে আসছেন।
কিন্তু তিনি ২০১৮ সালের এপ্রিল মাস থেকে পলাতক থাকায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করি এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়োগ প্রদান করেছেন।
আমি খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে বরিশাল-৪ আসনের সংসদ প্রার্থী।
অপর দিকে নিয়মিত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আব্দুল গাফফার আনসারী বলেন, আমি সাবেক এমপি পংকজ নাথ এর রোষানলে থাকার সুযোগ গ্রহণ করে আমাকে হয়রানিমুলক মামলা দিয়ে দূরে রেখে স্বঘোষিত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন রুহুল আমিন কামাল। তার কোন বৈধতা নেই। আমি মাদ্রাসায় উপস্থিত হলেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে দেন না। আমাকে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসতে বাঁধা দিচ্ছেন। মিথ্যা ও হয়রানিমুলক মামলা করলেও সে মামলায় আমি নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পরেও নতুন করে আরো অসত্য তথ্য উপাত্ত দিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। আমাকে অধ্যক্ষের চেয়ার বুঝিয়ে দিচ্ছেন না। অথ আদালতের রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বহাল রয়েছেন স্বঘোষিত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রুহুল আমিন কামাল। এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাদ্রাসার কয়েক লাখ টাকার গাছ কেটে বিক্রি করে লুটপাট করে খায়। তার ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব কোন শিক্ষাবোর্ড কিংবা মন্ত্রণালয় দেননি। ষড়যন্ত্র করে আমার ৮ বছরের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। আমার বিরুদ্ধে সভাপতির আনীত অভিযোগগুলো সত্য নয়। সভাপতির বিভিন্ন অনিয়মে আমি সঙ্গ না দেওয়াই আমাকে প্রতিষ্ঠান থেকে বাহইর করেছে।
ঐ রুহুল আমীন কামাল একজন চোর, একজন ডাকাত, খুনি, মিথ্যুক, চিটার ও বাটপার।
তিনি যেই রেজুলেশন দেখাচ্ছেন সেই রেজুলেশনে সাবেক সাংসদ পংকজ নাথের স্বাক্ষর জাল, মহিলা সদস্যের স্বাক্ষর জাল ও চেয়ারম্যান জামাল ঢালীর স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া রেজুলেশনে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আছেন।
৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত বলেন,আমাদের মাদ্রাসার অধ্যক্ষের পদ নিয়ে একটি ঝামেলা চলছে। এতে আমাদের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্ন ঘটছে। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি যাতে করে বিষয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যে মিমাংসা করা হয়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, একই প্রতিষ্ঠানে দুইজন অধ্যক্ষ দায়িত্ব পালনের কোন সুযোগ নেই। তৎকালীন সভাপতি সাবেক সাংসদ পংকজ নাথ এবং তৎকালীন ইউএনওর সিদ্ধান্তে রুহুল আমিন কামালকে ভারপ্রাপ্ত করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইলিয়াস সিকদার
বলেন, আমি যোগদানের পর থেকেই রুহুল আমিন কামালকে চিনি। গাফফার সাহেব আমাকে ফোন দিয়েছিলো। বিষয়টি অনেক আগের ইস্যু। এই মুহূর্তে মতামত দেওয়াটা আমার জন্য কষ্টকর। না জেনে মতামত দেওয়া ঠিক হবে না। তবে একই প্রতিষ্ঠানে দুই জন অধ্যক্ষ থাকার কোন সুযোগ নেই। আমি খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।