গাজীপুর প্রতিনিধি-
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিস যেন অনিয়ম আর দুর্নীতির এক দুর্গে পরিণত হয়েছে। ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না—অভিযোগে মুখর স্থানীয় বাসিন্দারা। ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেছে নিচ্ছেন নানা কৌশল। সাধারণ জনগণ সেবা নিতে গিয়ে চরম হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
জানা গেছে, নামজারি, জমাভাগ, মোকদ্দমা নিষ্পত্তি—সব ধরনের সেবার ক্ষেত্রেই এখানে চলে টাকা নিয়ে লেনদেনের খেলা। পরিমাণ অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয় ঘুষের রেট। টাকা না দিলে কাজ ফেলে রাখাসহ হয়রানির নানা কৌশল অবলম্বন করছেন কিছু অসাধু কর্মচারী ও দালাল চক্র।
সম্প্রতি একটি লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এসব তথ্য সামনে এসেছে। সাবেক ইউনিয়ন নায়েব মো. নূর আলম ও বর্তমান অফিস সহকারী কাম মিউটেশন সহকারী মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে রয়েছে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ। অভিযোগ রয়েছে, অফিসের দালাল চক্রের সঙ্গে তাদের রয়েছে সুস্পষ্ট যোগসাজশ। পরিচিত দালালের মাধ্যমে ঘুষ না দিলে, কোনো সেবা পাওয়া যায় না বলেও জানান ভুক্তভোগীরা।
সরকারি মালামালের দুর্ব্যবহার
অভিযোগ রয়েছে, রাজাবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে টিনের ছাউনির সংস্কারে নতুন রঙিন টিন বসানো হলেও পুরাতন ৫৪টি টিন, সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল, সার্কিট বোর্ড ও ব্যাটারি পরে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। কাঠাল ও মেহগুনি গাছের মূল্যবান কাঠগুলোও অদৃশ্য হয়ে গেছে। এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ জানানো হলেও এখনও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।
একতরফা নামজারি, চলছে মামলা
ধলাদিয়া এলাকার আতাব উদ্দিনের ৭ শতাংশ জমি খারিজে ভুল হওয়ার পর সেটি সংশোধন না করেই, দ্বিতীয় দফায় ৫৮৪০ নম্বর দলিল অনুসারে ১৫১ নং দাগে জমি জারির অভিযোগ উঠেছে। চলমান মামলার (নং ২৭৪/১৭, বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ আদালত, গাজীপুর) ও একাধিক আপত্তি থাকা সত্ত্বেও অপরপক্ষের নামে নামজারি সম্পন্ন করে দেয় ভূমি অফিস। ভূমি মালিক পক্ষ বলছেন—’টাকা দিলে সবই সম্ভব, তবে সেই টাকাও নির্ধারিত দালালের হাত দিয়ে যেতে হবে।’
এ ঘটনায় ভূমি অফিসে দায়ের হয় ১৪৬/২০২৪ নম্বর মোকদ্দমা। এসিল্যান্ড নূরী তাসমিন ঊর্মির নেতৃত্বে তদন্ত শেষে গত ২১ নভেম্বর রায় প্রদান করা হয়। রায়ে বলা হয়, “সৃজিত সকল জোত বাতিলপূর্বক, মূল জোতের অন্তর্ভুক্ত করা হলো। পক্ষগণকে নিজ নিজ হিস্যা অনুযায়ী নামজারির নির্দেশ দেওয়া হলো।”
পরবর্তীতে চারজন আবেদনকারী নতুন করে নামজারি আবেদন করেন (নথি নম্বর ৩৯২৬, ৩৯৩২, ৩৯৩৯, ৩৯৬৭)। এর মধ্যে শুধুমাত্র একটি মঞ্জুর হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বাকিগুলো মঞ্জুর হচ্ছে না শুধুমাত্র ঘুষ ও দালালচক্রের কাছে ‘চুক্তি’ না যাওয়ায়।
“মনিরুজ্জামান ছাড়া কাজ হয় না”
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অফিস সহকারী কাম মিউটেশন সহকারী মনিরুজ্জামান ছাড়া কোনো কাজই সম্ভব নয়। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি মিসকেসের সময় মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করেছেন। টাকা না দিলে কাজ ফেলে রাখা, অজুহাত দেখিয়ে ঘুরাতে থাকা—এটাই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে মনিরুজ্জামান ‘লেনদেনের অভিযোগ মনগড়া’ বলে দাবি করেন। তবে নথিপত্র পর্যালোচনায় রাজাবাড়ী ভূমি অফিসের অনিয়ম ও একপাক্ষিক সুবিধা দেওয়ার বেশ কিছু প্রমাণ উঠে এসেছে। এসব বিষয়ে এসিল্যান্ড বরাবর মো. জহিরুল ইসলাম নামক এক ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন
অভিযোগকারীরা বলেন, “রায়ে বণ্টননামা দলিলের কথা বলা হয়নি। একজনের ক্ষেত্রে তা ছাড়া মঞ্জুর হচ্ছে, অন্যদের ক্ষেত্রে আটকে দেওয়া হচ্ছে—এ কেমন আইন?”
তারা আরও জানান, ঘুষ ছাড়া যেন কিছুই সম্ভব না। টাকা দিলে নিয়ম ভাঙা যায়, আর না দিলে নিয়ম দেখিয়ে আটকে রাখা হয়। ভূমি অফিসের এ ধরণের আচরণে সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে।
দ্রুত তদন্ত ও ব্যবস্থার দাবি, রাজাবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দীর্ঘদিন ধরে চলা এ অনিয়ম ও দুর্নীতির চক্র ভেঙে জনসাধারণের সেবা নিশ্চিত করতে দ্রুত তদন্ত ও প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ বিষয়টি নিয়ে রাজাবাড়ী ইউনিয়ন ভুমি অফিসের মনিরুজ্জামান একাধিক ফোন করেও তার সাথে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।এবং বর্তমান এসিল্যান্ড সাইদুল ইসলাম বলেন, আমি বর্তমানে শ্রীপুরে ভুমি অফিসের নতুন এ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে তারপর বলবেন। আর বর্তমান নায়েব মোঃ আনোয়ার হোসেন উপর মহলে যোগাযোগ করুন। আমি বিষয়য়ে কিছু জানিনা।