শরিফা বেগম শিউলী,স্টাফ রিপোর্টার
রংপুরের মিঠাপুকুরে হত্যার পর বালি চাপা দেওয়া অবস্থায় এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে মিঠাপুকুর থানা পুলিশ। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে বাড়ির মালিক ফজলু মিয়া (৪২) নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। পরে উত্তেজিত জনতা শিশুটিকে ধর্ষণ এবং হত্যার অভিযোগে অভিযুক্তের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। এসময় উত্তেজিত জনতা মিঠাপুকুর থানার ওসিকে ৪ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে রংপুর জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার,উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টায় জিম্মি দশা থেকে (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিককে উদ্ধার করে।
রোববার ১১মে ২০২৫ সকাল আনুমানিক ১০ টার সময় এই ঘটনা ঘটে। হত্যাকান্ডের শিকার আফরিনা (৭) স্থানীয় একটি ব্রাক স্কুলের শিক্ষার্থী। সে ১০ নং বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের আরিফুল ইসলামের একমাত্র কন্যা।
শিশুটির স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুটি সকালে তার মাকে সাহায্য করতে নিজে গরুর ঘাস কাটে। ঘাসগুলো বাড়িতে রেখে ভাত খেয়ে খেলতে যায়৷ খেলতে যায় সকাল আনুমানিক ১০ টার সময় জনৈক এক ব্যক্তি অভিযুক্ত ফজলুর বাড়ির সামনে রাখা বালির উপর শিশুটির দু’টো -পা-দেখতে পান। তিনি গিয়ে শিশুটিকে টেনে বের করে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে চিৎকার দেন। পরে স্থানীয় লোকজন তার চিৎকারে গিয়ে দেখেন,শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে এবং শিশুটি মারা গিয়েছে। শিশুটির শরীরে এবং মাথায় গভীর ক্ষত। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এজন্য উত্তেজিত লোকজন ফজুলর বাড়িতে আগুন দেয়।
শিশুটিকে হত্যার খবরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে মিঠাপুকুর থানার (ওসি) উত্তেজিত জনতাকে থামানোর চেষ্টা করেন। এসময় উত্তেজিত জনতার সঙ্গে তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে ওসিকে ধাওয়া দেন। পরে ওসিকে একটি বাড়িতে অবরুদ্ধ করে ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে জনগনকে ভয় দেখানোর অভিযোগ তুলা হয়। যদিও ওসি বলছেন, ঘটনাস্থলে আলামত নষ্ট না করার জন্য জনতাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। পরে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা,উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সেনাবাহিনী এবং অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।
স্থানীয় বাসিন্দা সামছুল ইসলাম বলেন, ফজলুর স্ত্রী সন্তান বাড়িতে থাকেনা। সে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। জনতা তাঁকে আটক করে পুলিশে দেওয়ার সময় পাশ্ববর্তী একটি বাড়িতে সে শ্রমিকের কাজ করছিল। সিআইডি পুলিশের ফরেনসিক টিম প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন শিশুটিকে ধর্ষণের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাদের ধারণা হয়তোবা এটা ধর্ষণ চেষ্টা কিংবা অন্য কোনো বিষয় থাকতে পারে।
এ বিষয়ে মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, মব জাস্টিস অথবা অস্বাভাবিক কিছু যাতে না ঘটে সেই চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু উত্তেজিত জনতাকে উস্কে দিয়ে কিছু তরুণ পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে নিয়ে যায়। শিশুটিকে হত্যার কারণ এবং তথ্য উদঘাটনে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।