নিজস্ব প্রতিবেদক:
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নিষ্পেষণ ও কারাবরণের অধ্যায় পেরিয়ে অবশেষে রাজনীতির মঞ্চে ফিরে এসেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও নীলফামারী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন। তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও কারামুক্তিকে ঘিরে আজ শনিবার (১৭ মে) সকাল ১১টায় নীলফামারী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় এক বিশাল গণসংবর্ধনা ও মহাসমাবেশ।
জেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এই সংবর্ধনা উপলক্ষে পুরো নীলফামারী শহর সরব ও উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। শহরের মোড়ে মোড়ে ঝুলছে তুহিনকে বরণ করে নেওয়া ব্যানার-পোস্টার। চলছে স্লোগান ও মিছিল। কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের ভাষায়—এটি কেবল একটি সংবর্ধনা নয়, বরং একটি গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের ঘোষণা।
গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নীলফামারী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন। সংবর্ধনার মঞ্চে উঠে তিনি বলেন “এই দেশে জনগণের পক্ষে কথা বললেই তাকে শত্রু বানানো হয়। কিন্তু যারা মানুষের অধিকার হরণ করে, তারা প্রকৃত শত্রু—এই রাষ্ট্রের, এই মাটির। আমি কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছি, কিন্তু এখনো আমার দেশের গণতন্ত্র বন্দী। আজকের এই জমায়েত প্রমাণ করে—গণতন্ত্র মরে নাই, মানুষ আজও মুক্তির স্বপ্ন দেখে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাকে বন্দী করা হয়েছিল, কারণ আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলাম। কিন্তু জেলখানায় থেকেও আমি বিশ্বাস হারাইনি। আমি জানতাম, এই মাটির মানুষ একদিন জেগে উঠবে—আর সেই দিন আজ। এই গণসংবর্ধনা শুধু আমার জন্য নয়; এটি দেশের প্রতিটি নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের জন্য এক সম্মানের দিন।”
জেলা বিএনপির বিপ্লবী সাধারণ সম্পাদক মোঃ জহুরুল আলম বলেন, “জনগণের পক্ষে যিনি কথা বলেন, শাসকগোষ্ঠী তাঁকে বন্দী করে রাখে। তুহিন ভাই ছিলেন সেই কণ্ঠ, যাঁকে ভয়ের কারণেই দীর্ঘদিন অবরুদ্ধ রাখা হয়েছিল। আজ তিনি ফিরছেন—ফিরছেন গণমানুষের মাঝে, ফিরছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে জোরালো করতে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ইঞ্জিনিয়ার তুহিনের ফিরে আসাকে ঘিরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক উদ্দীপনা। তাঁরা বলছেন, তুহিন কেবল একজন নেতা নন—তিনি হচ্ছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে নীলফামারীর প্রতিরোধ-প্রতীক। তাঁর প্রত্যাবর্তন নতুন প্রজন্মের রাজনীতিকদের জন্যও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠতে পারে।
গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মোঃ শামীম ইসলাম, জেলা বিএনপির সভাপতি আ খ ম আলমগীর সরকার, সাধারণ সম্পাদক মোঃ জহুরুল আলম এবং জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (জিপি) আবু মোহাম্মদ সোয়েম। এছাড়াও বিএনপি’র বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও অসংখ্য দলীয় কর্মী-সমর্থক এ মহাসমাবেশে অংশ নেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই গণসংবর্ধনা কেবল জেলা পর্যায়ের কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি গোটা উত্তরাঞ্চলের রাজনীতিতে একটি নতুন গতিপ্রবাহ সৃষ্টি করতে পারে। কারাবরণ শেষে একজন জনপ্রিয় নেতার এমন প্রত্যাবর্তন বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় গভীর তাৎপর্য বহন করে।
তুহিনের সংবর্ধনার মাধ্যমে যেন উচ্চারিত হচ্ছে এক সুস্পষ্ট বার্তা:
কারাগার দিয়ে জনমত রুদ্ধ করা যায় না।
বিশ্লেষকদের মতে, এই আয়োজন শাসকশক্তির প্রতি এক সতর্কবার্তাও বটে—জনগণের কণ্ঠস্বরকে চেপে রাখা যতটা কঠিন, ততটাই অনিবার্য তার ফিরে আসা। নীলফামারী আজ তা-ই দেখছে।