পর্ব- ০১
সোহাগ হাওলাদার:
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়। ধীরে ধীরে সেই আন্দোলন সরকার পতনের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশে। সৃষ্টি হয় গণঅভ্যুত্থান। ছাত্র আন্দোলনে তোঁপের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগ করার পরপরই বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয় সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে গ্রাস করে চলেছে অনলাইন প্রতারক চক্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ২৪ ঘন্টাই তৎপর হয়েছে এসব প্রতারক চক্র। বিভিন্ন কৌশলে লোভনীয় চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে থাকে এসব প্রতারক চক্র। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অনলাইন জুয়া, ক্যাসিনো, তিন পাত্তি, অনলাইন মার্কেটিং। ঘরে বসে মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইনে দুই থেকে তিন ঘণ্টা কাজ করে হাজার হাজার টাকা ইনকামের সুযোগ দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে থাকে এসব প্রতারক চক্র। অনলাইন মার্কেটিং সাইটে প্রতারণার উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বড় অনলাইন মার্কেটিং কোম্পানি। “ololo Digital Edge Dc, Amazon, Alibaba, Daraz” সহ আরো বেশ কয়েকটি অনলাইন মার্কেটিং কোম্পানি প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছে বাংলাদেশে। এসব কোম্পানিগুলো কৌশলে ফাঁদে ফেলে সর্বস্বান্ত করেছে বাংলাদেশের অসংখ্য পরিবারকে। ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী ও যুব সমাজ নিজেদের সর্বস্ব হারিয়ে বেহাল দশায় জীবন যাপন করছে। লোভে পড়ে অনলাইন মার্কেটিংয়ের ফাঁদে পা দিয়ে সব হারিয়ে লোক লজ্জার ভয়ে অনেকেই নিশ্চুপ রয়েছেন। এসব প্রতারক চক্র বিভিন্ন কৌশলে ভুক্তভোগীদের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে হোয়াটসঅ্যাপ অথবা টেলিগ্রামে প্রথমে এসএমএস করে থাকেন। যেখানে উল্লেখ করা হয়, ঘরে বসে অনলাইনে মোবাইল অথবা ল্যাপটপের মাধ্যমে মাত্র ১ থেকে ২ ঘন্টা কাজ করে প্রতিদিন ইনকাম করুন ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। এছাড়া বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে প্রতারক চক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগীদের মোবাইলে লোভনীয় অফার দিয়ে আকৃষ্ট করে থাকেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী প্রতিবেদককে বলেন, “ololo Digital Edge Dc” কোম্পানির অনলাইন প্রতারণার ফাঁদে সব হারিয়ে এখন তিনি নিঃস্ব। ওই ভুক্তভোগীর কাছে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমে তার ব্যবহৃত মোবাইলের টেলিগ্রামে সোনিয়া নামের একজন একটি এসএমএস পাঠায়, যেখানে লেখা থাকে, We need 150 more Staffs in bangladesh : 2h to 3h Per day.Income: BDT 2200 to 3600 Per dαy.May i send demo? এরপরে ওই ভুক্তভোগী অনলাইনে কাজ করার সম্মতি প্রদান করলে সোনিয়া নামের ওই প্রতারক ভুক্তভোগীর মোবাইল নাম্বার জারা তাহসিন নামের আরেক প্রতারককে দেয়। যারা তাহসিন নামের ওই প্রতারক ” ololo Digital Edge Dc” কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেয়। পরবর্তীতে ওই প্রতারক তাকে একটি ওয়েবসাইটের লিংক দিয়ে সেখানে মোবাইল নাম্বার ও পাসওয়ার্ড দিয়ে একটি একাউন্ট খুলতে বলেন। ভুক্তভোগী তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার ও একটি পাসওয়ার্ড দিয়ে একাউন্ট খোলার পরে ওই প্রতারক এজেন্ট জারা তাহসিন তাকে অন্য একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে ভুক্তভোগীকে এ্যাড করেন। যেই গ্রুপের নাম “Digital Edge” ৪৬৯২ ব্যাচ। ওই গ্রুপে দুজন এডমিন ছিলেন যাদের নাম মোহাম্মদ আশরাফুল ও মোহাম্মদ জাফর ইকবাল এছাড়া আরো একজন সিনিয়র এজেন্ট ছিলেন যার নাম আজমির হোসেন। পরবর্তীতে ওই প্রতারক চক্রের এজেন্ট জারা তাহসিন ভুক্তভোগীকে কিভাবে কাজ করতে হয় তার গাইডলাইন দিতে থাকেন। কাজ বোঝার জন্য তার একাউন্টে ১০ হাজার টাকা ট্রাইল বোনাস দেয়া হয় কোম্পানির তরফ থেকে। এভাবে কাজ দেখিয়ে দিয়ে পরবর্তীতে ১০ হাজার টাকা ডিপোজিট করে একইভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেন প্রতারক চক্রের এজেন্ট জারা তাহসিন। কিন্তু ওই ভুক্তভোগী বেশ কয়েকদিন যাবৎ তাদের কোম্পানির সম্পর্কে এবং বাংলাদেশে তাদের অফিস সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতারক এজেন্ট জারা তাহসিন বারবার এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নিজের পরিচয় গোপন রাখেন এবং তাদের কোম্পানি সম্পর্কে এটাই বোঝানো হয় যে এটি একটি সিঙ্গাপুরের কোম্পানি। এখানে এজেন্টদের পার্সোনাল কোন বিষয়ে মেম্বারদের সাথে শেয়ার করার নিয়ম নেই। এদিকে ওই ভুক্তভোগী ৫ থেকে ৭ দিন যাবত গ্রুপের অন্যান্য সদস্যদের কার্যক্রম লক্ষ্য করে দেখতে পান যে, অন্যান্য সদস্যরা প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা ডিপোজিট করে প্রায় ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত উইথড্র করছেন। যেখানে লাভের পরিমাণ ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী ২২-০৫ -২০২৫ ইং তারিখে তাদের কাস্টমার সার্ভিসের দিকনির্দেশনায় ১০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে ডিপোজিট করেন এবং প্রতারক চক্রের অনলাইন মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন প্রোডাক্টের দাম সাবমিট করে মাত্র ৩০ মিনিটে ১৪ হাজার ৩ শত টাকা উইথড্রো করেন। যেখানে মাত্র ৩০ মিনিটে লাভের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪ হাজার ৩ শত টাকা। পরের দিন অর্থাৎ ২৩-০৫-২০২৫ ইং তারিখে পুনরায় তিনি আবার ১০ হাজার টাকা ডিপোজিট করেন। একইভাবে কাজ সম্পন্ন করতে গিয়ে শেষের দিকে ডিজিটাল প্যাকেজ অর্থাৎ ভুক্তভোগীর একাউন্ট ব্যালেন্সের অধিক মূল্যের প্রোডাক্ট সামনে চলে আসে। যার ফলে ওই ভুক্তভোগীকে পুনরায় আবার ১৫ হাজার ৩৮০ টাকা ডিপোজিট করতে হয়। কাজ সম্পন্ন করে ঐদিন ৩০ হাজার ৫০০ টাকা উইথড্র করেন ওই ভুক্তভোগী। অর্থাৎ দ্বিতীয় দিনে তার লাভের পরিমাণ ৫ হাজার ৫০০ টাকা। পরেরদিন অর্থাৎ ২৪-০৫-২০২৫ ইং তারিখে গ্রুপের এ্যাডমিন মোহাম্মদ আশরাফুল কোম্পানির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উল্লেখ করে ডিপোজিট অংকের উপরে বিশেষ বোনাস এর ঘোষণা দিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। যেখান সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা ডিপোজিট করলে ৩৫% বাড়তি বোনাস এর কথা উল্লেখ করা হয়। এভাবেই অনলাইনে অল্প সময় কাজ করে বেশি টাকা আয় করার প্রলোভন দেখিয়ে মূলত সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলে এসব প্রতারক চক্র। আরো বিস্তারিত আগামী পর্বে…