মোঃ জাহিদ ইসলাম রংপুর
রংপুর মহানগরীর মনোহারপুর সিংগিমারিতে এক হিংস্র প্রাণীর আক্রমণে অসংখ্য মানুষকে আহত হয়। দিনে দুপুরেও ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন অনেকেই। আতঙ্কে শিশুদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না অভিভাবকরা। তবে অজানা প্রাণীটিকে শনাক্ত করতে পারেনি গ্রামবাসী। অনেকের কথা শিয়াল আবার কেউ কেউ বলতিছে হায়না। বরং আক্রমণের ঘটনার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় নারী-পুরুষ থেকে সববয়সী মানুষের মধ্যে বেড়েছে ভয় ভীতি।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মনোহরপুর সিংগিমারি গ্রামে এক অচেনা হিংস্র প্রাণীকে দেখতে পেয়েছেন এলাকাবাসী। গত ৯ অক্টোবর প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে রাস্তার পাশে গেলে ট্রাক্টর চালক রাহেদুল মিয়া এক অচেনা প্রাণীর আক্রমণের শিকার হন। এ সময় মুখে ও পেটে আঁচড় কেটে তাকে আহত করে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন আক্রান্ত সেই ট্রাক্টর চালক।রাহেদুল মিয়া বলেন, রাস্তা থেকে কিছু দূরে প্রাকৃতিক কাজ সারতে নামি। এ সময় ধানক্ষেত থেকে প্রাণীটি এসে আমাকে কামড়ে দেয়।
তাকে পুকুরে ফেলে দিলে উঠে এসে সে আবার আমাকে থাবা দিয়ে আঘাত করে। এর আগে গ্রামে এমন হিংস্র প্রাণী চোখে পড়েনি। প্রাণীটির ওজন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কেজি হবে। গায়ের লোম সাদা রঙের। আর কাঁধে লোম আছে।একই গ্রামের বাসিন্দা আসাদুল মিয়া। তিনি গত ১৩ অক্টোবর ধানক্ষেতে কীটনাশক ছিটাতে গিয়ে ওই অচেনা প্রাণীটিকে দেখতে পায়। সেখান থেকে ভয়ে কীটনাশকের বোতল ফেলে পালিয়ে আসেন তিনি।হিংস্র প্রাণীর থাবায় আহত বৃদ্ধা হানিফা বেগম বলেন, ভাত খেয়ে রাতে বের হলাম, এ সময় হঠাৎ কোথা থেকে যেন প্রাণীটা এসে বুকে কামড় দিতে ধরছিল। অনেক চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারছিলাম না। পরে চুলের মধ্যে তার ধারালো দাঁত আটকে যায়, প্রাণীটি আমার কাঁধে কামড় দেওয়ার চেষ্টা করছিল। পাথর দিয়ে মারার পর পালিয়ে যায়।আক্রমণের স্বীকার আতাউর বলেন, ছেলেকে দোকানে পাঠিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন আমার হাতে এসে কামড় দিয়েছে। আমরা অনেক আতঙ্কে আছি। প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ না নিলে আমাদের বিপদ হতে পারে। ভয়ে বাচ্চাগুলোকে স্কুলে পাঠাতে পারছি না।প্রাণীটি আরও কয়েকজনকে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছে বলে জানিয়েছে গ্রামবাসী। লাঠিসোঁটা নিয়ে গ্রামের সবাই এখন প্রাণীটিকে খুঁজছে। রাতে যে কারোর ওপর আক্রমণ হতে পারে বলেও শঙ্কা করছেন তারা। দ্রুত এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ চান মনোহরপুর সিংগিমারি গ্রামের জনসাধারণ।প্রত্যক্ষদর্শী লিয়ন বলেন, প্রাণীটির কাঁধে লোম আছে। দেখতে সাদা। আমার দাদি হানিফা বেগমকে আক্রমণের সময় আমি এগিয়ে আসি। প্রাণীটি দেখতে অনেক ভয়ঙ্কর, এমন প্রাণী আমি আগে কখনো দেখনি।একই গ্রামের মাসুদ পারভেজ মিম বলেন, এটার সমাধান করতে প্রশাসন ও বন বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। রাতে বের হতে পারি না। এর কি কোনো প্রতিকার নেই। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ আমাদের এই বিপদের হাত থেকে বাঁচান।এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমদেল হোসেন সরকার বলেন, বন বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ দপ্তরকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। গ্রামবাসীকেও সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমি ওই প্রাণীটি দেখিনি। তবে অনেকের কাছে বিষয়টি শুনেছি। দু-একজন আক্রমণের শিকার হয়েছেন।রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এনামুল হক বলেন, আমরা ঘটনাটি শুনেছি। ওই প্রাণীটি রাতের বেলা বের হয়, এ কারণে শনাক্ত করা যায়নি। হিংস্র প্রাণীটিকে আটক করতে বন বিভাগকে কাজ করতে হবে। তবে আমাদের কোনো সহযোগিতা লাগলে আমরা গ্রামবাসীর পাশে থাকব।