তোফায়েল আহমেদ, ধামরাই উপজেলা প্রতিনিধি
১৯৭১ সালের এই দিনে শহীদ রেজাউল করিম মানিক বীরপ্রতীক শাহাদাৎ বরণ করেন। সকাল ১০ ঘটিকায় ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলায় ডাউটিয়া, কালামপুরে ঐতিহাসিক ভায়াডুবি ব্রীজের পাশে অবস্থিত, শহীদ মানিক স্মৃতিসৌধ এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন শহীদ রেজাউল করিম মানিক বীর প্রতীক এর সহযোদ্ধা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন খান (মোতালিব), বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সাহেব আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মরতুজ আলী, ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আসগর আলী। একইদিনে ঢাকার মগবাজারে শহীদ রেজাউল করিম মানিক এর বাসভবনে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এসময় দৈনিক বিডি ক্রাইম টাইমস এর প্রতিনিধির সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শহীদ রেজাউল করিম মানিক বীর প্রতীক এর সংক্ষিপ্ত জীবনী ও মুক্তিযোদ্ধের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। শহীদ রেজাউল করিম মানিক এর ছোট বোন বিলকিস আরা বেগম এর রচিত “মানিকের রক্তস্নাত স্বাধীনতা” বইটিতে শহীদ মানিকের শৈশব থেকে শাহাদাৎ বরণ পযর্ন্ত প্রায় প্রতিটি ক্ষণ এমন ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, লেখনীর প্রতিটি ক্ষণে, প্রতিটি পাতায় মানিকের স্পর্শ অনুভব করা যায়। শহীদ মানিক বেচেঁ আছে, বাংলার সার্বভৌমত্বে, স্বাধীন বাংলার পতাকায় গাঢ় সবুজের মাঝে লাল রক্তে মিশে আছে শহীদ মানিক সহ লাখো শহীদের প্রাণ।
রাজশাহী শহরে পদ্মা নদীর কোল ঘেঁষে ঘোড়ামারা নামক স্থানে সবুজ প্রকৃতির লীলাভূমি। তখন এটি ছিল হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। এই পাড়ায় অনেক জমিদার বাড়ি ছিল। দেশ বিভাগের পর তারা প্রায় সকলেই ওপারে (ভারতে) চলে যায়। একটা ছোটোখাটো জমিদার বাড়ি ভাড়া নিলেন, অ্যাডভোকেট মোঃ ওয়াজেদ আলী। বাড়িটি ছোটো ছিল কিন্তু চারপাশে প্রচুর গাছপালা, পুকুর-মাঠ পরিবেষ্টিত । সবকিছু মিলে অপরূপ পরিবেশ বিরাজ করত। এই বাড়িতেই ১৯৪৭ সালের ১৬ জুন অ্যাডভোকেট মোঃ ওয়াজেদ আলী ও স্বর্ণগর্ভা রাজিয়া বেগমের গর্ভে শহীদ রেজাউল করিম মানিকের জন্ম হয়। শহীদ রেজাউল করিম মানিক বীরপ্রতীক ঢাকা উত্তর মুক্তিবাহিনীর প্রথম কমাণ্ডার। শহীদ মানিক রাজিয়া বেগম ও এডভোকেট ওয়াজেদ আলীর একমাত্র পুত্র।
তরুণ টগবগে এক আদরের ছেলে মায়াময় চোখ দুটি তে ধরণীর রূপ-রস-গন্ধ অনুভব করে সৌন্দর্যে মুগ্ধ ভাসা ভাসা দুটো চোখে উঠেছে সংগ্রামী চেতনা। শহীদ রেজাউল করিম মানিক ১৯৭১ খৃষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর গণহত্যা শুরু করলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুব রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্বাধীনতা ঘোষণায় উজ্জীবিত রেজাউল করিম মানিক ২৫ মার্চের প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। উজাড় করে দিয়ে ছিনিয়ে এনেছে দেশের স্বাধীনতা।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের অভিপ্রায়ে তিনি ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের বালুরঘাট প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। পরে ঢাকা নিবাসী মানিক ও অন্য ২১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সেক্টর-২ এর হেড কোয়ার্টার মেলাঘর-এ সেক্টর কমাণ্ডার কর্নেল খালেদ মোশারফের কাছে পাঠানো হয়। কর্নেল খালেদ মোশারফ ও মেজর হায়দারের পরিকল্পনায় রেজাউল করিম মানিকের নেতৃত্বে ৫২ জনের একটি প্রশিক্ষিত গেরিলা দল সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকা অপারেশনের লক্ষ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এই গেরিলা দলটি “ঢাকা উত্তর মুক্তিবাহিনী” হিসাবে পরিচিত। ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী গ্রামাঞ্চলে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর অবস্থানের উপর দুঃসাহসিক আক্রমণ পরিচালনা করে ঢাকা উত্তর মুক্তিবাহিনী শত্রুদের প্রভূত ক্ষতিসাধন করে। এতে করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে যায়। ১৪ই নভেম্বর ১৯৭১ ধামরাই-এ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ডাউটিয়া ভাইয়াডুবি সেতু ধ্বংস করার সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পাল্টা আক্রমণে মানিক শাহাদাত বরণ করেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের সাথে লড়াই করে জীবন উৎসর্গের স্বীকৃতি-স্বরূপ শহীদ রেজাউল করিম মানিককে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে।জাতির কাছে শহীদ মানিকের আত্মত্যাগ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।