এম জাফরান হারুন, নিজস্ব প্রতিবেদক, পটুয়াখালী::
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় পূর্ব বিরোধের জের ধরে এক রিক্সা চালক দিনমজুরের শেষ সম্বল ঘরখানায় আগুন দিয়ে পুড়ে ধ্বংস করার অভিযোগ উঠেছে বিরোধী পক্ষ মোঃ সেরাজ দেওয়ান (৫৫) নামে এক লোকের বিরুদ্ধে। এতে ভুক্তভোগী পরিবার বাউফল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার (১৭ই ফেব্রুয়ারী) দিবাগত রাত ১২টার দিকে উপজেলার মদনপুরা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডভূক্ত মাঝপাড়া গ্রামে। ভুক্তভোগী ওই রিক্সা চালক দিনমজুরের নাম মোঃ শহিদুল ইসলাম (৩৫), তিনি ওই গ্রামের বাসিন্দা মোঃ রাজ্জাক হোসেন এর ছেলে।
সরেজমিনে ভুক্তভোগী মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, আজ থেকে ১৩ বছর পূর্বে এই জমিটা আমি কবলা করি। জমিটা কবলা করার পর থেকেই আমার বাড়ির চাচতো চাচা সেরাজ দেওয়ান আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করতে থাকে এবং তার সাথে বিরোধে জরিয়ে পরি। কারণ হলো সে এই জমিটা কবলা করতে চেয়েছিল। কিন্তু জমির মালিক তার কাছে কবলা না দিয়ে আমার কাছে কবলা দেয়। পরে সেরাজ দেওয়ান আদালতে এ পর্যন্ত ৫টি মামলায় দায়ের করলে ৩টি মামলায় আমার পক্ষে রায় আসে। আর ২টি মামলা চলমান রয়েছে। তার ভীতর আজ থেকে ৫ বছর পূর্বে ভিটি বাগান করে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে থাকার জন্য একটি টিনের চৌচালা ঘর নির্মাণ করে বসবাস শুরু করি। এবং প্রায় সময়ই সেরাজ দেওয়ান আমাকে উচ্ছেদ করার জন্য বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। যাহার রেকর্ড সহ মোবাইল নম্বর আমার কাছে জমা রয়েছে। এদিকে আমি জীবিকার তাগিদে ঢাকাতে রিক্সা চালাই। শুধু বাড়িতে আমার স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে বসবাস করে। হঠাৎ শুনতে পাই আমার ঘরে আগুন দিয়ে আমার সব শেষ করে দেওয়া হয়েছে। আমার ঘর ও ঘরের মালামাল মিলিয়ে ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতি করা হয়েছে। আমি থানায় নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
ঘরে থাকা স্ত্রী মোসাঃ সালমা বেগম বলেন, আমি প্রতিদিনের মতো আমার দুই মেয়ে কে নিয়ে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ি। ঘুমের ঘোরে চলে যাবো এমন সময় দেখি আমার ঘরের চারপাশে কারা যেন ঘুরে ঘুরে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। মেয়েদের নিয়ে ডাকচিৎকার দিয়ে বাইরে বের হয়ে এসে দেখি তিনটা লোক দৌড়ে চলে যাচ্ছে। কাউকে চিনতে পারিনি। আমি আমার ঘরের কিছু রক্ষা করতে পারিনি। আমার সবকিছু পুড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। আমাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে। একাজ আমাদের বিরোধী পক্ষ সেরাজ দেওয়ান তার লোকজন দ্বারা এমন কাজ করেছে। আমি বিচার চাই, বিচার চাই।
সরেজমিনে স্থানীয়রা জানান, শহিদুল ইসলামের সাথে সেরাজ দেওয়ানের জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে। তবে এমন কাজ কে বা কাহারা করেছে তা আমাদের জানা নেই। রিক্সা চালিয়ে জমিটা কিনে বাড়ি করেছে শহিদুল। যে-ই করুক এমন নেক্কারজনক ঘটনা সত্যিই সামাল দেওয়া যায় না। আমরা এলাকাবাসি সঠিক বিচার দাবি করছি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে।
এব্যাপারে জানতে সেরাজ দেওয়ানের মোবাইল নম্বরে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করে বলেন, এব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট। তবে আমাদের চেয়ারম্যানের কাছে একটা শালিসি দেওয়া ছিল। সেখানে শহিদুল তার পক্ষে কোনও কাগজপত্র দেখাতে না পারায় চেয়ারম্যান তাকে জায়গা ছেড়ে দিতে বলেছেন।
স্থানীয় চেয়ারম্যান মোঃ গোলাম মোস্তফা এব্যাপারে বলেন, নেক্কারজনক একটা কাজ হয়েছে আমার ইউনিয়নে। এমন কাজ আমরা আশাবাদী না। আশা করছি পুলিশ দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে সঠিক বিচার করবেন। আর এদিকে আমিও দেখছি।
এবিষয়ে বাউফল থানার ওসি শোনিত কুমার গায়েন বলেন, ঘটনা শোনার সাথে সাথে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিমের সাথে আমি সহ আমার পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থালে উপস্থিত হই। তবে ফায়ার সার্ভিসের টিমের কাছ থেকে ততক্ষণাত জানতে পারলাম শর্টসার্কিটের আগুনে এমন হয়েছে। পরে ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে জানলাম এক পক্ষের সঙ্গে তাদের জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল। এবং অভিযোগও পেয়েছি। তবে ভুক্তভোগী পরিবার যদি বিজ্ঞ আদালত যান এবং তদন্ত দেয় তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।