হৃদয় শিকদার ,নিজস্ব প্রতিবেদক
আওয়ামী লুটপাট জামানার বদৌলতে মাগুরা জজ কোর্টের জেলা ও দায়রা জজের পিয়ন আলীনুরের ভাগ্যের চাকা খুলেগেছে। আওয়ামী লীগের আইনিজীবি ও নেতাদের পারপাস সার্ভ করে কামিয়েছেন অঢেল টাকা। আওয়ামী আমলে গত ১৬ বছরে মাগুরা জজ কোর্ট ও চীফ জুডিশিয়াল কোর্টে যত জনবল নিয়োগ হয়েছে তার সবকটার কলকাঠি নেড়েছেন এই পিয়ন আলীনুর। নিয়োগ কমিটির বিচারক বা জজ সাহেবরা নিরাপদ থাকার জন্য পিয়ন আলীনুরকেই বেছে নিয়েছেন বারবার।
এছাড়া কর্মকর্তা ও কর্মচারি বদলীতেও পিয়ন আলিনুর মুখ্য ভুমিকা পালন করেছেন। ফলে তার আংগুল ফুলে বটগাছ হয়েছে। তিনি সরকারী চাকুরীর বিধি বিধান ভংগ করে মাগুরা জেলা জজ আদালতে দীর্ঘ ১৭ বছর দায়িত্ব পালন করছেন। হাজার অপরাধ করলেও তাকে বদলী করা যায়নি। প্রতিবারই আইন বিচার ও সংসদ মন্ত্রণালয়ে তদবীর করে মাগুরাতেই রয়েগেছেন। এ খাতে ব্যয় করেছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।
মাগুরা জজ কোর্টের একাধিক সুত্রে জানাগেছে,পিয়ন আলীনুরের বাড়ী পাশ^বর্তী রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ এলাকায়। তিনি ১৭ বছর আগে মাগুরা জজ কোর্টে পিয়ন পদে যোগদান করেন। এরপর প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকা ঘুস দিয়ে জেলা ও দায়রা জজের অর্ডালি পদে পদায়ন বাগিয়ে নেন।
জেলা ও দায়রা জজের অর্ডারলি হওয়ার সুবাদে গুরুত্বপূর্ণ মামলার নথির তথ্য পাচার ও মামলার আসামী পক্ষের সাথে যোগাযোগ করে অবৈধ চুক্তির মাধ্যমে বিচার বা রায় বেচাকেনা করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
মাগুরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে যখন যে বিচারক বদলী হয়ে আসেন তখনই তাকে বিশেষ কৌশলে খুশি করে আজ ১৭ বছর যাবত একই পদে একই আদালতে ডিউটি করে যাচ্ছেন এই মহাক্ষমতাধর পিয়ন আলিনুর।
নিয়োগ বাণিজ্য,মামলার তদবীর,আদালতের গোপনীয় তথ্য পাচার করে পিয়ন আলিনুর এখন কয়েক কোটি টাকার মালিক। সেই অর্থে তিনি মাগুরা পৌর এলাকায় আলীশান ডুপ্লেক্স বাড়ী নির্মাণ করেছেন। মাগুরা শহরে প্রচুর জমি কিনেছেন। ব্যাংকে তার পুত্র ও স্ত্রীর নামে রয়েছে মোটা অংকের টাকা। এছাড়া তার জন্মস্থান রাজবাড়ি জেলায় প্রচুর সম্পদ ক্রয় করেছেন।
গত ২৪/১০/২০২৪ তারিখে মাগুরা জজ কোর্টে নাজির ও সহকারী নাজির পদে যে ৬ জন নিয়োগ হয়েছে সেই নিয়োগে তার পুত্রকে সহকারী নাজির পদে চাকুরী দিয়েছেন তিনি। এই নিয়োগ বাতিল চেয়ে চাকুরী প্রার্থীরা মানববন্ধন করলেও সেটি আমলে নেননি নিয়োগ কমিটি। এই নিয়োগে মোট ৮৫ লাখ টাকা ঘুস লেনদের হয়েছে বলে গুঞ্জন চলছে। নিয়োগের সামগ্রীক কলকাটি নেড়েছেন এই পিয়ন আলিনুর এমন কথায়ই সর্বত্র শোনা যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাগুরা জজ কোর্টের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারি জানান, পিয়ন আলিনুরের ভয়ে তারাও সব সময় তটস্থ থাকেন। তার কথা মতই কাজ করতে হয়। তার কথামত কাজ না করলেই প্রশাসনিক হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়। আলিনুর জেলা ও দায়রা জজ স্যারকে বলে শোকেজ,বদলী,সাসপেন্ড এমন কি চাকুরী খেয়ে ফেলার চেষ্টা চালান। জজ কোর্টের সামান্য একজন পিয়নের এতো ক্ষমতা দেখে মাগুরাবাসী বিস্মিত!
তাদের প্রশ্ন: বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের এই কি উদ্দেশ্য ছিলো? একজন পিয়নের কথায় চলবে বিচারালয়? এটা কি ভাবা যায়? পিয়ন আলিনুর কিভাবে ১৭ বছর যাবত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চাকুরী করছেন? তিনি কত টাকা বেতন পান? মাগুরা ও রাজবাড়ী জেলায় যে সম্পদ রয়েছে তার আয়ের উতস কি? নিয়োগ বাণিজ্য করে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করলেও কেন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না?
এ বিষয়ে দ্রত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড.আসিফ নজরুল ও আইন সচিবের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করছেন মাগুরাবাসী।