এম জাফরান হারুন::
পটুয়াখালী জেলার বহুল কাক্ষিত গলাচিপা সেতুটি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে একনেকে অনুমোদন হয়েছে এবং প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় গলাচিপা সেতু। কাজটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপদ (সওজ) অধিদফতর। সর্বশেষ সংশোধনীতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২১ কোটি টাকা।
পটুয়াখালীর রামনাবাদ নদীর ওপর সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বরিশাল বিভাগীয় সদর ও পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে গলাচিপা উপজেলার নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ আরও সহজতর হবে রামনাবাদ নদীর উপর প্রস্তাবিত গলাচিপা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে। প্রতিদিন এই নদী থেকে ফেরি পারাপার হয়ে জেলা, বিভাগ ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচল করে শতাধিক যানবাহন।
ফেরি ও ট্রলারে পারাপারে সময় নষ্টের পাশাপাশি নানামুখী ভোগান্তি পোহাচ্ছে বিভাগীয় শহর ও রাজধানী গামী যাত্রীরা। মুমূর্ষু রোগীদের এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ফেরি পারাপারের জন্য। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ কর্তৃক প্রস্তাবিত গলাচিপা উপজেলার জেলা মহাসড়কের (জেড-৮৮০৬) ৭০তম কিলোমিটারে রামনাবাদ নদীর ওপর গলাচিপা সেতু নির্মাণ ৫২১ কোটি টাকা প্রাক্কালিত ব্যয়ে জানুয়ারি ২০২৩ থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ সালে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও এখনো সেতু নির্মাণের কাজ শুরু না হওয়ায় উৎকন্ঠায় দিন পার করছেন গলাচিপা উপজেলার মানুষ।
একটি সেতুর অভাবে ভোগান্তিতে দিন পার করছেন গলাচিপা সহ পার্শ্ববর্তী রাঙ্গাবালী ও দশমিনা উপজেলার ১০ লাখ মানুষ। তিন উপজেলার মানুষের বহু বছরের লালিত স্বপ্ন গলাচিপা নদীর ওপরে গলাচিপা সেতু নির্মাণ হবে।
ড্রাইভার মোঃ রনি জানান, গত ত্রিশ বছর ধরে শুনে আসছি গলাচিপা সেতুটি হবে কিন্তু বাস্তবে কোন কর্যক্রম চোখে পরছে না। আমাদের অনেক ভোগান্তি হয় ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে ফেরির জন্য। ব্রিজটি হোক এটা আমাদের জোর দাবি।
সাবেক এক সেনা সদস্য বলেন, আমরা এখানে অবস্থান করতেছি গলাচিপা টু পটুয়াখালীর যোগাযোগ পথে রামনাবাদ নদীর মাঝখানে ফেরিতে। এ ফেরিতে দীর্ঘদিন ধরেই ছোলো ভাবে চইলা আসতেছে এতে যাত্রীর দারুণ ভোগান্তি। যেমন, আমি এখানে আসছি এক ঘন্টা হয়ে গেলো আমার জরুরী কাজ হরিদেপুর যেতে পারছি না। খেয়া পারাপারে ঘাটে ১০ টাকা দিতে হয় অনেকের সে সামর্থ্য থাকেনা তাদের ফেরিতে উঠে তাও ভোগান্তি। দীর্ঘদিন ধরে শুনতেছি এখানে ব্রিজ হবে সরকার পরিবর্তন হয়, এমপি পরিবর্তন হয় কিন্তু কার্যকর কিছুই দেখিনা। যে পরিস্থিতি দেখতেছি আমরা জীবিত অবস্থায় নাও দেখতে পারি, আল্লাহপাক জানেন কবে এ ব্রিজ পাবো।
স্থানীয় সাধারণ জনগণ জানান, আমার বয়স তো পঞ্চাশ ওভার হইছে আর বিশ-ত্রিশ বছর ১৯৯৬ থেকে শুনতেছি এ সেতু হবে রাস্তা হচ্ছে কিন্তু সেতু হচ্ছে না। তবে আমাদের এ সেতু খুবই দরকার। রাঙ্গাবালী, দশমিনা, বাউফল এবং কালাইয়া যোগাযোগের জন্য সেতুটি হলে খুবই ভালো হয়।
গণ অধিকার পরিষদের গলাচিপা উপজেলা শাখার আহবায়ক জানান, রামনাবাদ সেতুটি আমাদের দীর্ঘদিনের আশা ছিল। আমরা ইতিমধ্যে এর সুফল ভোগ করতে যাবো ইনশাল্লাহ। অনতিবিলম্বে এর কাজ ধরবে। রামনাবাদ সেতু আমাদের ওই কাক্ষিত প্রচেষ্টার ফল। গলাচিপা সেতুর কারণে প্রায় আট-দশ লাখ মানুষের যোগাযোগের ভোগান্তি লাগব হবে। রাঙ্গাবালী, দশমিনা সহ চরকাজল ও চর বিশ্বাসের আপামর জনগণের দুঃখকষ্ট লাঘব হবে।
জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশ জেলা কমিটির সদস্য অধ্যাপক ইহাইয়া খান জানান, যে এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থা যতো ভালো সে এলাকা তত উন্নত হয়। আপনারা যে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন গলাচিপা সেতু এ প্রসঙ্গটি অতন্ত্য জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ। রামনাবাদ নদীর ওপর গলাচিপা সেতু করা হচ্ছে, করতে হবে এবং একনেকে প্রস্তাবিত এ কথাগুলো দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় জনবহুল এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ সেতু না থাকার কারণে পটুয়াখালী, বরিশাল ও ঢাকায় চিকিৎসার জন্য যাতায়াত পথে যেভাবে কষ্ট করছে এ কষ্টটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। উপজেলার প্রতিটি মানুষই এ কষ্টের সাথে জড়িত। অতি দ্রুত রামনাবাদ নদীর ওপর গলাচিপা সেতু করা হলে এ উপজেলার মানুষজন আরও সাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে পারবে। গলাচিপার এ শহরটি এরকম অবহেলিত থাকতোনা আরও গুরুত্বপূর্ণ শহর হয়ে দাড়াতে পারতো।
বিএনপির উপজেলা শাখার সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান জানান, গলাচিপা উপজেলার রামনাবাদ নদীর ওপর গলাচিপা সেতু লাখ লাখ লোকের প্রাণের দাবি। তিন উপজেলায় দশ লাখ লোকের বসবাস। পাশ্ববর্তী রাঙ্গাবালী উপজেলার লোকজন গলাচিপা উপজেলা রাস্তা দিয়ে চলাচল করে তাদের বাহির হওয়ার আর কোন রাস্তা নাই। কাজিই এই সেতুটি জরুরি ভিত্তিতে হওয়া প্রয়োজন দীর্ঘদিনের দাবি এই এলাকার লোকের। আমরা ইদানীং শুনতে পাচ্ছি এ সেতুর কাজ শুরু হবে মানুষ আশায় বুক বেধে আছে। যত দ্রুত গলাচিপা সেতুটি সম্পন্ন হবে অতই মানুষের স্বপ্ন পুরন হবে। উপজেলার মানুষের আত্মোসামাজিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান জানান, গলাচিপা উপজেলার রামনাবাদ নদীতে দীর্ঘদিনের একটি সেতু নির্মাণের যে দাবি এ অঞ্চলের মানুষের আর সে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য সেতুটি দ্রুত প্রয়োজন। রামনাবাদ চ্যানেলে সেতুটি বর্তমানে প্রস্তাবিত ও অনুমোদিত। সেতুটি নির্মাণ হলে মানুষের দীর্ঘদিনের যাতায়াতে কষ্ট এবং খেয়া ও ফেরি পারাপারের যে দূর্দশা তা লাঘব হবে।
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার নদীর উপর সেতু নির্মাণ হলে রাঙ্গাবালী, দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলার সাথে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সকল বিভাগীয় শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন আসবে। সারাদেশের সাথে চালু হবে ফেরি বিহীন সড়ক যোগাযোগ। এই অঞ্চলের ১০ লাখ মানুষের কমবে পথ, বাঁচবে সময়। দেশের অর্থনৈতিতে অপার সম্ভাবনায় রূপান্তরিত হবে এই অঞ্চলগুলো।