মোঃ রেজাউল ইসলাম লিটন, নীলফামারী:
আসছে ঈদকে সামনে রেখে নতুনকোচ মেরামতের কাজে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন রেল শ্রমিকরা।
সরেজমিনে দেখা মেলে দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় জনবল ও কাঁচামালের সংকট থাকলেও পুরোদমে কাজ চলমান রেখেছেন তাঁরা। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ১০০টি কোচ মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছেন কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা এমনটি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
রেলওয়ে সুত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে রেলওয়ে কারখানা থেকে মেরামত শেষে ৮৪টি কোচ আউটটার্ন দেওয়া হয়েছে। সেগুলো রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে। আরও ১৬টি কোচ মেরামতের কাজ চলছে। যা নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ করার আশা সংশ্লিষ্টদের। বাকিগুলোও মেরামত শেষে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ।
এই কারখানায় মেরামত করা কোচ গুলো যুক্ত হবে বিভিন্ন ট্রেনে। প্রতি মাসে কোচ মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ঈদে সেই সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হয়।
কারখানা সূত্রে জানা যায় জনবল সংকটের কারণে কারখানায় প্রতিদিনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। ২৮টি শপে ৭৪০টি মেশিন পরিচালনায় নেই প্রয়োজনীয় দক্ষ শ্রমিক। পর্যাপ্ত বাজেটও নেই। ফলে চাহিদা ও সময়মতো কাঁচামালের সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকের পদ আছে দুই হাজার ৮৫৯টি। এর মধ্যে জনবল আছেন ৭১৬ জন। দুই হাজার ১৪৩টি পদই শূন্য।
কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা বলেন, বর্তমানে কারখানায় চারজন শ্রমিকের কাজ একজনকে করতে হচ্ছে। রেল যেহেতু সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, তাই কষ্ট হলেও কাজ করে যাচ্ছি। আমরা অচল কোচগুলো সচল করে তুলছি। প্রতিবছরের মতো এবারেও ঈদে অতিরিক্ত কাজ করছি।
কারখানার ক্যারেজ শপের ইনচার্জ (এসএসএই) মোমিনুল ইসলাম জুয়েল জানান, এ কারখানায় মিটারগেজ (ছোট) ও ব্রডগেজ (বড়) উভয় লাইনের কোচ মেরামত হয়ে থাকে। ঈদযাত্রার জন্য কোচ মেরামতের কাজ চলছে পুরোদমে। মেরামত শেষে এসব কোচ আন্তঃনগর ট্রেনসহ বিশেষ ট্রেনে সংযোজন করা হবে।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার কর্মব্যবস্থাপক মো. মমতাজুল ইসলাম বলেন, ঈদের কোচ সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে কারখানার শ্রমিকেরা কাজ করছেন। আশা করি ঈদের আগেই সব কোচ রেলবহরে সংযুক্ত করা সম্ভব হবে, পাশাপাশি ঈদে ঘরমুখি যাত্রীদের জন্য লক্ষ্যমাত্রার বাইরেও কিছু কোচ মেরামত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ জানান, এবছর ১০০টি কোচের টার্গেট নেওয়া হয়েছে, ১৫ মে পর্যন্ত ৮৪টি হস্তান্তর করা হয়েছে। আশা করছি ঈদের আগে বাকি কোচ গুলো হস্তান্তর করা যাবে। নির্ধারিত কর্মঘণ্টার বাইরে শ্রমিকেরা অতিরিক্ত সময় কাজ করে উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন। জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৮৭০ সালে ১১০ একর জমিতে সৈয়দপুর রেলকারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ কারখানার ২৮টি শপে কোচ মেরামত করা হয়। এ ছাড়া ক্যারেজ, ওয়াগন ও লোকোমোটিভের এক হাজার ২০০ রকমের খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয় এ কারখানায়।