নিজস্ব প্রতিবেদক:
আবহমান বাঙালি জাতির ঐতিহ্য ও শতবর্ষের প্রাচীন সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ নৌকা বাইচ। নদীমাতৃক বাংলাদেশের গ্রামীণ লোক সংস্কৃতির সেই ঐতিহ্যকে বুকে ধারণ করে বগুড়ার করতোয়া নদীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ।
নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই শহরের এসপি ব্রিজ ও বেজোড়া ঘাট এলাকায় উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধসহ হাজারো মানুষ এ বাইচ উপভোগ করতে উপস্থিত হয়ে মেতে ওঠে আনন্দ-উল্লাসে। করতোয়া নদীর পাড়ে বিভিন্ন খাবারের পসরা নিয়ে বসে গ্রাম্যমেলা।
জেলা পুলিশের আয়োজনে, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বগুড়ার সহযোগিতায় গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় এসপি ব্রিজ ঘাটে প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম ঝুনু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তৌফিক হাসান ময়না।
আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর করতোয়া নদীর দুইপাড়ে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে প্রতিযোগিতাটি শুরু হয়। এতে জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ আশেপাশের এলাকা থেকে রং-বেরংয়ের নৌকা এই আয়োজনে অংশ নেয়। নৌকা বাইচ শুরু হলে পুরো এলাকাজুড়ে নৌকার বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দে ‘হেইওরে, হেইওরে’ ডাকে মুখরিত হয়ে উঠে।
বাদ্য-বাজনা আর ভাটিয়ালি-জারি গানের সঙ্গে নৌকাবাইচ উপভোগ করেন বগুড়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা হাজারো মানুষ। নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় চলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।
বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দে করতোয়া নদীর এস,পি ঘাট থেকে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে বেজোড়া ব্রিজ ঘাটে এসে শেষ হয়।
এটি করতোয়া নদীতে নৌকা বাইচের তৃতীয় আয়োজন। ২০১৮ সালে প্রথমবার বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম আসর, এরপর জেলা পুলিশের আয়োজনে ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের ব্যবস্থাপনায় ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল দ্বিতীয় আয়োজন।
তৃতীয় বারের মত আয়োজিত নৌকা বাইচের এবারের শ্লোগান ছিলো নদী বাঁচলে, পরিবেশ বাঁচবে। নদী বাঁচাও, পরিবেশ বাঁচাও।
এরপর বেলা ৫টায় প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বগুড়া-৬ সদর আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপু। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, চিরায়ত শ্বাশত বাংলার প্রতীক নৌকা, বঙ্গবন্ধুর প্রতীক নৌকা এবং নির্বাচনের প্রতীক নৌকা।
নৌকার কান্ডারি জননেত্রী শেখ হাসিনা নীরবে নিভৃতে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়ে চলেছেন। গণমানুষের উন্নতি হলে দেশ উন্নত হবে। জাতির জনকের নেতৃত্বে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত প্রতিটি সংগ্রামে বাঙালি জাতি বিজয় অর্জন করেছে। বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর নৌকা প্রতীককে আবারো জয়যুক্ত করে শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃৃত্বে উন্নয়ন কাজ অব্যাহত থাকায় নদীমাতৃক বাংলাদেশ অদম্য অগ্রযাত্রায় উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে সামনে এগিয়ে চলেছে। আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বের উন্নত দেশের কাতারে উপনীত হবে।
জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম, সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মাদ শফিউল আজম।
প্রতিযোগিতায় গাবতলী উপজেলার কালাই হাটা গ্রামের উড়াল পঙ্খী নৌকা প্রথম ও শেরপুর উপজেলার সততা নৌকা দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। শেষে প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।