বরগুনা প্রতিনিধি:
জনৈক মোঃ শফিকুল ইসলাম (৪৩), পিতা—মোঃ আবদুস ছালাম, মাতা—মোসাঃ সাজেদা বেগম, সাং—দক্ষিণ পাথরঘাটা, থানা—পাথরঘাটা, জেলা—বরগুনা ২১/১০/২০২৩ খ্রি. তারিখ পাথরঘাটা থানায় লিখিতভাবে জানান যে, তার পুত্র ভিকটিম হাসিব(১৩) ২০/১০/২০২৩খ্রি. সন্ধ্যা অনুমান ১৯:৩০ ঘটিকায় পাথরঘাটা প্রেস ক্লাব সংলগ্ন নিজ দোকান হতে পূজা দেখার জন্য যায়। পরে হাসিব বাড়ি ফিরে না আসায় ভিকটিমের পরিবারের লোকজন সম্ভাব্য সকল স্থানে অনেক খোজাখুজি করে হাসিবের কোন সন্ধান না পেয়ে পাথরঘাটা থানার সাধারণ ডায়েরী নং—৯৯১, তারিখ—২১/১০/২০২৩খ্রি. মূলে নিখোঁজ সংবাদ লিপিবদ্ধ হয়। অফিসার ইনচার্জ, পাথরঘাটা থানা তদন্তভার এসআই(নিঃ)/মোঃ আলী হোসেন এর উপর অর্পণ করেন।
পরবতীর্তে ঐ দিন নাম গোপন করে একজন দুষ্কৃতিকারী নিখোঁজ হাসিবের মোবাইল নম্বর (০১৭৩৮—৯৫৩৯১৫) থেকে চট্টগ্রাম অবস্থানরত হাসিবের চাচা মনির এর মোবাইল ফোনে কল করে মুক্তিপণ বাবদ ৩,০০,০০০/—(তিন লক্ষ) টাকা দাবী করে। পাশাপাশি হাসিব শারীরিকভাবে অসুস্থ বলে জানায়। তখন হাসিবের চাচা মনির অপহরণকারীর দেয়া বিকাশ নম্বরে (০১৭২৭—৯৭০৭০৫)’তে ৪,০০০/—(চার হাজার) টাকা পাঠায়।
বিয়য়টি অবহিত হওয়ার সাথে সাথে ইহা একটি চাঞ্চল্যকর মাদ্রাসা শিশু ছাত্র নিখোঁজ, অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবীর ঘটনা তাই তাৎক্ষনিকভাবে জনাব মোঃ মোজাম্মেল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ), বরগুনা এর নেতৃত্বে জনাব মোঃ ছালেহ আহম্মদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পাথরঘাটা সার্কেল, জনাব মোঃ বশির আলম, অফিসার ইনচার্জ, জেলা গোয়েন্দা শাখা, বরগুনা এবং পাথরঘাটা থানার একটি চৌকস টিম উক্ত ভিকটিমকে উদ্ধার এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হয়। উক্ত টিম পুলিশ সুপার, বরগুনার সার্বিক দিক নির্দেশনায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পাথরঘাটা থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই মূল অপহরণকারী (১) আব্দুল্লাহ আল নোমন ওরফে তানভীর ওরফে শিশু ফকির(১৯), পিতা—মোঃ মহিউদ্দিন ফরাজি, সাং—গহরপুর, ০১নং ওয়ার্ড সহ তার সহযোগী (২) আব্দুর রহিম কাজী (৪৮), পিতা—আঃ সালাম কাজী, সাং—দক্ষিণ জ্ঞানপাড়া, ০৬নং ওয়ার্ড, চরদুয়ানী ইউপি, (৩) আব্দুর রহিম মুন্সী (৩৫), পিতা—মোঃ ইউনুস মুন্সী, মাতা—রহিমা বেগম, (৪) মোসাঃ তাহিরা (১৯), স্বামী—আব্দুল্লাহ আল নোমান ওরফে তানভির ওরফে শিশু ফকির, (০১নং আসামীর স্ত্রী), সাং—গহরপুর, ০১নং ওয়ার্ড, ০৪নং পাথরঘাটা সদর ইউপি, এপি—পিতা—মোঃ ইউনুস মুন্সী, সাং—হোগলাপাশা ০৪নং ওয়ার্ড, চরদুয়ানী ইউপি (৫) মোসাঃ রহিমা (৫৫), স্বামী—মোঃ ইউনুস মুন্সী, (০১নং আসামীর শাশুড়ী), (৬) মোসাঃ তানজিলা (২৮), পিতা—মোঃ ইউনুস মুন্সী, (৭) মোঃ ইউনুস মুন্সী (৬৫), পিতা—মৃত আলী আকব্বর মুন্সী, সর্ব সাং—হোগলাপাশা ০৪নং ওয়ার্ড, চরদুয়ানী ইউপি, থানা—পাথরঘাটা, জেলা—বরগুনা (৮) মোঃ মিজানুর রহমান (৩৪), পিতা—মোঃ খলিলুর রহমান, সাং—পশ্চিম হেউলীবুনিয়া, ০৪নং ওয়ার্ড, থানা ও জেলা—বরগুনাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। মূল অপহরণকারী আব্দুল্লাহ আল নোমান’কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার দেয়া তথ্য ও দেখানো মতে ভিকটিম হাসিবের লাশ ড্রামে ভর্তি কাঁথা দিয়ে পেচানো অবস্থায় পাথরঘাটা থানাধীন দক্ষিন বাইনচটকি গ্রামের মজিদ খানের বাড়ি সংলগ্ন ওয়াপদা বেড়িবাঁধের ঢালে মাটির পুরাতন গর্তে পাতা দিয়ে ঢাকা অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুল্লাহ আল নোমান জানায় যে, ২০/১০/২০২৩খ্রি. সন্ধ্যা অনুমান ১৯:৩০ ঘটিকায় পাথরঘাটা পৌরসভাধীন প্রেসক্লাব সংলগ্ন দোকানের সামনে থেকে ভিকটিম হাসিব’কে ডেকে নিয়ে তার পাথরঘাটা পৌরসভাধীন ০১নং ওয়ার্ডস্থ ইমান আলী সড়কের ভাড়াটিয়া বাসায় নিয়ে সু—কৌশলে সেভেন আপ এর সাথে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে খাইয়ে অচেতন করে। পরের দিন ২১/১০/২০২৩ খ্রি. দুপুরের নিখেঁাজ হাসিবের মোবাইল নম্বর (০১৭৩৮—৯৫৩৯১৫) থেকে চট্টগ্রাম অবস্থানরত ভিকটিম হাসিবের চাচা মনির’কে ফোন করে হাসিবের মুক্তিপণ দাবী করে। কিন্তু মুক্তিপণের টাকা না দিয়ে বিষয়টি পুলিশ’কে জানানো হয়েছে মর্মে টের পেয়ে অপহরণকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে পরস্পর যোগসাজসে ভিকটিম হাসিব’কে হত্যার উদ্দেশ্যে হাত, পা বেঁধে মেঝেতে শুইয়ে ভিডিও চিত্র ধারণ করে এবং উক্ত ভিডিও ফুটেজ ভিকটিম হাসিবের চাচার ইমো নম্বরে পাঠিয়ে দেয়। পরবতীর্তে হাসিবের গলায় নাইলনের রশি পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ ড্রামের মধ্যে ঢুকিয়ে কাঁথা দিয়ে পেচিয়ে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে প্রথমে তার ভাড়াটিয়া বাসা থেকে অজ্ঞাতনামা অটোরিক্সা যোগে তার শ্বশুর বাড়ি হোগলাপাশা নিয়ে খড়ের গাধার মধ্যে লুকিয়ে রাখে। পরবতীর্তে সেখান থেকে ২২/১০/২০২৩ খ্রি. বিকাল অনুমান ১৬:৩০ ঘটিকায় গ্রেফতারকৃতরা পরস্পর যোগসাজোসে লাশ গোপন করার উদ্দেশ্যে দক্ষিন বাইনচটকি ওয়াপদার রাস্তার ঢালের গর্তের মধ্যে পাতা দিয়ে ঢেকে রেখে আসে। ভিকটিমের উদ্ধারকৃত লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত পূর্বক ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ সংক্রান্তে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।