তপন দাস, নীলফামারী
নীলফামারীর জলঢাকায় সাব-রেজিস্ট্রি অফিস নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। ঘুষ-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে জলঢাকা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস।
সরকারি এই কার্যালয়টি ঘুষ, অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে এমন পরিচিতিই ছড়িয়েছে উপজেলা জুড়ে।
গত বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারী) সরেজমিনে দেখা যায়, জলঢাকা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ডেলিভারি কক্ষ টি সি শাখায় মোজাম্মেল হক নামে একজন বসেন।
তিনি প্রতিনিয়ত ওই কক্ষের একটি টেবিলে বসে এনএন ফিসের নামে প্রত্যেক দলিল প্রতি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত গ্রহন করেন।
যেখানে সরকারি বিধি মোতাবেক ২৬০ টাকা পর্যন্ত নেওয়ার নিয়ম এবং মসজিদের জন্য (৫০-১০০) টাকা বাদে বাড়তি সব টাকা বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয়। এদিনে মোট ৫২টি দলিল সম্পাদন হয়।
তাহলে একদিনে মোট কত টাকা দুর্নীতি করা হয়েছে? এই টাকা গ্রহনের বিষয়ে মোজাম্মেল হককে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন,”লেখক সমিতির অনুমতিক্রমে আমি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে জমা দিয়ে দেই। পরে এ টাকা কোথায় যায়? কি হয়? জানি না।” এছাড়া ফিঙ্গার টিপসই এর জন্য ২০ টাকা করে নেওয়া হয়। এসব দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে বাধা সম্মুখীন হয় সংবাদকর্মীরা। টাকা দিয়ে মেনেজ করতে চায় সিন্ডিকেট গ্রুপটা। এই সিন্ডিকেট গ্রুপের প্রভাবে সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জমির বিভিন্ন ত্রুটি দেখিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এ টাকা সিন্ডিকেটের সমন্বয়ে ভাগ-ভাটোয়ারা করা হচ্ছে।
এছাড়াও দলিলের নকল তুলতে গেলে সরকারি ফির দ্বিগুণ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয় বলে অনেক ভুক্তভোগী সেবাগ্রহীতা। সেবা নিতে আসা ভুক্তভোগীরা জানায়, কালকে সারাদিন থেকে ঘুরে গেছি দলিল হয়নি।
আজকেও ঘুরে যাওয়া লাগতো,সাংবাদিক ভাইয়েরা আসার কারনে আজকে দলিল হলো। এমন হওয়ার কারন কি প্রশ্নের জবাবে বলেন, টাকা দিলেই তারাতাড়ি দলিল হয়। এছাড়া দলিল সম্পাদনের নামে দিনের পর দিন অসাধু দলিল লেখকদের যোগসাজশে মোটা অঙ্কের ঘুষের মাধ্যমে চলছে দলিল রেজিস্ট্রির কাজ। এখানে ঘুষ ছাড়া কোনো দলিল রেজিস্ট্রি করা যায় না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
এটা এখন নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। ভুক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, জলঢাকা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অনিয়ম-দুর্নীতির পেছনে রয়েছেন সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের নকলনবিস অ্যাসোসিয়েশনের একটি চক্র, স্থানীয় দলিল লেখকদের একটি চক্রসহ অফিসের অসাধু কিছু কর্মকর্তারা। কৃষকরা জমি কেনা-বেচা করতে এলে তাদের সরকারের ফি আর দলিল লেখকদের পারিশ্রমিক ছাড়া আর কোনো খরচ নেই। কিন্তু দেখা যায় দলিল প্রতি দলিল লেখক সমিতি জোরপূর্বক পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ করেন। এটা অন্যায় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই রক্তচোষা সিন্ডিকেট ভেঙে সাধারণ কৃষকদের মুক্ত করার জন্য প্রশাসনের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জলঢাকাবাসির।
জলঢাকা সাব-রেজিস্ট্রার কর্মকর্তা মোঃ লুৎফর রহমান বলেন, আমি এ অফিসে নতুন এসেছি এতো কিছু জানি না। তবে এন ফিসের জন্য ৩৬০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া যাবে। বাড়তি টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নাই এবং টিপসইয়ের সময় যদি কেউ খুশি হয়ে টাকা দেয় তাহলে নিতে পারে,তাছাড়া টাকা নেওয়ার কোন নিয়ম নাই।