এম জাফরান হারুন::
মামার কথায় সাড়ে তিন লাখ টাকার চুক্তিতে ভালো বেতনের চাকরি পেতে ভাগিনা মো. সাগর নামে এক যুবককে মালয়েশিয়া নিয়ে গিয়ে মামার নির্দেশে মামার শ্যালকের কাছে জিম্মি হয়ে নির্যাতন সহ মুক্তিপনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জিম্মি সাগর পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের দিয়ারা কচুয়া গ্রামের ইদ্রিস ফরাজির ছেলে। বছর দেড়েক আগে মামা সোহরাব প্যাদা কর্তৃক তার শ্যালক দাশপাড়া গ্রামের বশার হাওলাদারের প্রবাসী ছেলে মো. আমিন হাওলাদার সাগরকে মালয়েশিয়া নিয়ে যান। তারপর থেকে সাগরের ওপর শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
ছেলেকে ফিরে পেতে এবং দালাল চক্রের সদস্যদের শাস্তির দাবি করে রবিবার (২ মার্চ) বাউফল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মালয়েশিয়ায় জিম্মি সাগরের মা বিউটি বেগম।
সাগরের মা বিউটি বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ছোট ভাই সোহরাব প্যাদা বরিশাল মুরগির ব্যবসা ও তার শ্যালক আমিন হাওলাদার দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়া থাকেন। আমার ছেলেকে ভালো বেতনে মালয়েশিয়ায় চাকরির প্রলোভন দেখায় আমার ভাই সোহরাব। বিনিময়ে তার শ্যালককে দিতে হবে সাড়ে তিন লাখ টাকা। ধার-দেনা করে টাকা জোগাড় করে দেই। পরে ভাই সোহরাবের নির্দেশে তার শ্যালক আমিন দেড় বছর আগে আমার ছেলেকে মালয়েশিয়া নিয়ে গিয়ে ভালো চাকরি না দিয়ে উল্টো আমার ছেলেকে জিম্মি করে নির্যাতন শুরু করে এবং মুক্তির জন্য সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় ছেলের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ করতে দিচ্ছে না। কয়েকদিন আগে আমাকে ফোন দিয়ে ছেলেকে মারধর করেন। ছেলের কান্নায় আমার বুকটা ফেটে গেছে। সোহরাবের বুদ্ধি পরামর্শে তার শ্যালক আমার ছেলেকে জিম্মি করে নির্যাতন করতেছেন।’
ছেলেকে ফিরে পেতে আকুতি জানিয়ে বিউটি আরও বলেন, ভালো বেতনের জন্য আমার ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছি। ভাবছি ছেলের বেতনের টাকায় অসুস্থ্য স্বামীকে নিয়ে বাকি জীবন সুখে থাকব। কিন্তু আমাদের সব স্বপ্ন শেষ। আমার ভাই ও তার শ্যালক আমার ছেলেকে বিদেশ নিয়ে নির্যাতন করতেছে। আমাদের সঙ্গে কথাও বলতে দিচ্ছে না। ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে সহযোগিতা ও দোষিদের বিচার দাবি করেছেন বিউটি বেগম।
এদিকে জিম্মি সাগরের ছোট মামা মো. ইউসুফ বলেন, ‘দালাল আমিন প্রথম বার ২০২৩ সালে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া নেওয়ার সময় থাইল্যান্ডে আটক হন আমার ভাগিনা সাগর। ৪৭ দিন কারাভোগের পর তাকে মুক্তি দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দেয় থাইল্যান্ড সরকার। পরে বৈধ ভিসায় মালয়েশিয়া নিয়ে এখন আমার ভাগিনাকে নির্যাতন করে এবং মুক্তিপণ চাচ্চে আমিন।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে আমিন হাওলাদারের হোয়াটসঅ্যাপে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভি করেননি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সোহরাব প্যাদা বলেন, আমার শ্যালকের মাধ্যমে বিদেশে পাঠিয়েছি। বিদেশ পাঠাতে আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। সেই টাকা এখনও পরিশোধ করেনি। আগে আমার টাকা পরিশোধ করুক তারপর!
এবিষয়ে বাউফল থানার ওসি মো. কামাল হোসেন বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।