কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অসহায় ও হতদিরদ্র পরিবারের ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মূখী করতে ব্যতিক্রমী একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অসহায় একটি পরিবারের শিক্ষার্থী’র মাকে সেলাই মেশিন ও শিক্ষার্থীদের মাঝে স্কুল ব্যাগ তুলে দিয়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন গামুরতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি’র সভাপতি শাহিনা পারভীন সীমা। রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে ওই বিদ্যালয়ের অফিস রুমে বসে তিনি এগুলো তাদের হাতে তুলে দেন।
জানা যায়, উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের মজিদপুর গ্রামের দৃষ্টি ও শারীরিক প্রতিবন্ধি পিতা হাবিবুল প্যাদা ও মাতা পারুল বেগমের দুই সন্তান স্থানীয় গামুরতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। ছেলে আবু সালেহ চতুর্থ শ্রেণীতে ও মেয়ে সুমাইয়া শিশু শ্রেণীতে অধ্যায়নরত রয়েছে। কিন্তু কয়েকদিন ধরে তারা বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলো। বিষয়টি বিদ্যালয়ের সভাপতি শাহিনা পারভীন সীমার নজরে আসলে ওই শিক্ষার্থীদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেন। তিনি জানতে পারেন ওই পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারনে তাদের সন্তানদের বিদ্যালয় পাঠাতে পারছে না। ওই শিক্ষার্থীদের মাকে উপার্জনের একটি ব্যবস্থা করে দিলে তারা বিদ্যালয়ে আসতে পারবে। তখন সভাপতি তার নিজ উদ্যোগে ও নিজস্ব অর্থায়নে ওই শিক্ষার্থীদের মা পারুল বেগমের হাতে একটি সেলাই মেশিন ও শিক্ষার্থীদের হাতে স্কুল ব্যাগ তুলে দেন। যাতে পারুল বেগম সেলাই মেশিন দিয়ে উপার্জন করতে পারে ও তার সন্তানদের নিয়মিত বিদ্যালয় পাঠিয়ে লেখাপড়া চলমান রাখতে পারে।
সেলাই মেশিন হাতে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে অসহায় মা পারুল বেগম বলেন, আমার স্বামী একজন প্রতিবন্ধি। অর্থের অভাবে আমার সন্তাদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করেছিলাম। কিন্তু সভাপতি আপা আমাকে একটি সেলাই মেশিন দিয়ে উপার্জন করার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আমি তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করি।
গামুরতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পূর্ণিমা রাণী বলেন, ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে শাহিনা পারভীন সীমা আপা আমাদের বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি’র সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন। সেসময় থেকে বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আজ একটি অসহায় পরিবারকে সেলাই মেশিন ও স্কুল ব্যাগ উপহার দিয়ে দু’টি শিক্ষার্থীকে ঝড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছেন তিনি।
এবিষয়ে গামুরতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি’র সভাপতি ও উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনা পারভীন সীমা বলেন, শিশু দু’টি খুবই অসহায় একটি পরিবারের সন্তান। অর্থের অভাবে তাদের শিক্ষার পথ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তাই ওদের মাকে একটি সেলাই মেশিন কিনে দিয়েছি। যাতে সে অর্থ উপার্জন করতে পারে আর তার সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে পারে। এছাড়া, ওই শিক্ষার্থীসহ আরো কয়েকজন শিক্ষার্থীদের হাতে স্কুল ব্যাগ ও বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ফুটবল উপহার দিয়েছি। তিনি সমাজের সকল বিবেকবান ও স্বচ্ছল ব্যক্তিদের এবিষয়ে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান করেন।