গাজীপুর প্রতিনিধি, রাসেল মিয়া :
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের মইশানবাড়ী বাজার সংলগ্ন এলাকায় গতকাল বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫ তারিখে এক বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুভ সূচনা হলো “হুমায়রা কুটির”-এর। ঘরোয়া ও অর্গানিক খাবারের এই নতুন ঠিকানাটি শুধু সুস্বাদু খাবারের প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং নারীর ক্ষমতায়ন ও গ্রামীণ সংস্কৃতির এক অনন্য মিলনমেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি ছিল গ্রামীণ আবহে পরিপূর্ণ এক উৎসব। এর বিশেষ আকর্ষণ ছিল গ্রামীণ রাঁধুনিদের রন্ধন প্রতিযোগিতা, যেখানে ২০ জন গ্রাম্য রাঁধুনি নিজেদের হাতে প্রস্তুত বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী ও ঘরোয়া খাবার নিয়ে অংশ নেন। উপস্থিত বিচারকমণ্ডলীর চুলচেরা বিশ্লেষণের পর সেরা তিনজন রাঁধুনিকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় এবং তাঁদের হাতে আকর্ষণীয় পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এই প্রতিযোগিতা স্থানীয় রন্ধনশিল্পের দক্ষতা এবং গ্রামীণ খাবারের বৈচিত্র্যকে দারুণভাবে তুলে ধরে।
অতিথিদের কণ্ঠে উচ্ছ্বাস: একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও শুভ উদ্বোধক ছিলেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মোঃ রাসেল রানা। তিনি “হুমায়রা কুটির”কে একটি ব্যতিক্রমধর্মী ও সময়োপযোগী উদ্যোগ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, “এটি শুধু একটি খাবারের প্রতিষ্ঠান নয়, বরং নারীর ক্ষমতায়ন, গ্রামীণ সংস্কৃতির প্রচার ও অর্গানিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার একটি সাহসী প্রচেষ্টা। এই ধরনের উদ্যোগ সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”
অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন সাংবাদিক অধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির সভাপতি মোঃ সুমন চৌধুরী। তিনি নারীর ঘরোয়া দক্ষতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “আমাদের সমাজে নারীরা ঘরোয়া পর্যায়ে অনেক কিছুই করেন, যা প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায় না। হুমায়রা কুটির সেই ঘরোয়া দক্ষতাকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। এটি একদিকে যেমন নারীর আর্থিক স্বাবলম্বিতার পথ তৈরি করবে, তেমনি স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য পরিবেশনেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।”
অনুষ্ঠানের সভাপতি হারুন অর রশীদ এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, “এমন একটি সৃজনশীল উদ্যোগ আজকের তরুণ ও উদ্যোক্তা প্রজন্মের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। ঘরোয়া খাবারকে কেন্দ্র করে যারা সমাজে পরিবর্তন আনতে চান, হুমায়রা কুটির তাঁদের জন্য একটি সফল উদাহরণ। আমি এই উদ্যোগের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করছি।”
বিশিষ্টজনদের উপস্থিতি ও প্রতিষ্ঠাতার স্বপ্ন
উদ্বোধনী আয়োজনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জিহাদ কম্পিউটারিং ট্রেনিং সেন্টার-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সজীব সরকার, বাংলাদেশ টেলিভিশন (গাজীপুর)-এর সাংবাদিক মোহাম্মদ রাজু আহমেদ ও মোঃ সুজন, এবং মাতৃবাংলা গাজীপুর-এর সাংবাদিক মোঃ জাকারিয়া সিকদার। এছাড়াও, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়ে এই নতুন যাত্রাকে স্বাগত জানান।
“হুমায়রা কুটির”-এর প্রতিষ্ঠাতা নাসরিন জাহান হনুফা তাঁর স্বপ্নের কথা তুলে ধরে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, “হুমায়রা কুটির আমার একটি স্বপ্নের বাস্তব রূপ। আমি সবসময় চেয়েছি এমন একটি স্থান গড়ে তুলতে, যেখানে মানুষ ঘরোয়া পরিবেশে স্বাস্থ্যসম্মত ও অর্গানিক খাবারের স্বাদ উপভোগ করতে পারবেন। পাশাপাশি, এই কুটিরের মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও তাঁদের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আত্মনির্ভরশীল করে তোলার লক্ষ্য নিয়েই আমি এগিয়ে যাচ্ছি। সকলের ভালোবাসা ও সহযোগিতা পেলে হুমায়রা কুটিরকে আরও বহুদূর নিয়ে যেতে চাই।”
হুমায়রা কুটির: আধুনিকতায় গ্রামীণ আবহ ও ব্যতিক্রমী পরিষেবা “হুমায়রা কুটির” আধুনিকতার সাথে গ্রামীণ আবহের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়েছে। এখানে স্বাস্থ্যসম্মত ও অর্গানিক খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি রয়েছে:- হোম ডেলিভারি: অনলাইনে অর্ডার করে ঘরে বসেই স্বাস্থ্যকর খাবারের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ।
– সরাসরি খাবার গ্রহণ: অতিথিরা সরাসরি এসে বাহারি ফুল ও ফলের সমাহারে সাজানো শান্তিপূর্ণ পরিবেশে খাবার উপভোগ করতে পারবেন।
– নারী উদ্যোক্তা শক্তি: গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থান ও আত্মনির্ভরশীলতার সুযোগ সৃষ্টি।
হুমায়রা কুটির মইশানবাড়ী বাজার সংলগ্ন, ২০ নম্বর ওয়ার্ড, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন-এ অবস্থিত। এটি কেবল একটি খাবারের প্রতিষ্ঠান নয়, বরং এটি একটি অনন্য সামাজিক উদ্যোগ—যেখানে স্বাদ, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন এবং গ্রামীণ সংস্কৃতির এক নবীন সম্মিলন ঘটেছে। উদ্বোধনের প্রথম দিনেই এটি এলাকাবাসী ও অতিথিদের কাছ থেকে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে, যা ভবিষ্যতে গাজীপুরসহ সারাদেশে স্বনামে পরিচিত একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠার পথ খুলে দিয়েছে।