মোঃ রয়িসুল সরকার রোমন
অপলক দৃষ্টিতে তিস্তার অববাহিকায় তাকিয়ে আছে গোলাপি রানি, মানোয়া বেগম, সুদারিনি ও মেনেকা বেগম। তিস্তার দিকে তাকিয়ে থাকা এটা তাদের শেষ স্মৃতি। কয়েকবার ভাঙনের কবলে রেহাই পাননি এই পরিবারগুলো। শেষ চিহ্ন হিসেবে বাড়ি-ভিটে টুকু থাকলেও এখন সেটিও অবশিষ্ট নেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, এই দুশ্চিন্তায় কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে তারা। শুধু চোখের পানি বলে দিচ্ছে এ যেন তিস্তা বাসীর এক বোবা কান্না।
প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষকে নিঃস্ব করে তিস্তা। বিলীন হয়ে যায় কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ। সাথে লক্ষ মানুষের অপরিপূর্ণ স্বপ্ন থেকে যায় তিস্তার বুকে।
তৃতীয় দফায় বন্যা হওয়ার পর তিস্তা ও ধরলার বিভিন্ন জায়গায় ভাঙনের দেখা দিয়েছে। গতকাল লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নে তিস্তার অববাহিকায় দেখা যায় গত এক সপ্তাহে প্রায় ৩৫ টি পরিবার বসতভিটা হারিয়ে আজ নিঃস্ব। পরিবারগুলোর সদস্যরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। নেই কোনো স্থায়ী ঠিকানা ও ব্যবস্থা।
কয়েকবার ভাঙনের কবলে পড়া মেনেকা বেগম (৬০) বলেন, তিস্তা হামাক শ্যাষ করি ফেলাইছে। স্বামীর সংসার বাঁধার পর প্রতি বছর বাড়ি ভাঙগা নাগে। হামরা খালি আশায় আছি তিস্তা আর বোধহয় ভাঙবের নয়। কিন্তু তিস্তা হামার কথা শোনে না। হামার দুঃখ-কষ্ট বোঝে না। তিস্তা হামার জন্য অভিশাপ, তিস্তায় হামাক নিঃস্ব বানাইছে।
একই এলাকার ভাঙনের শিকার হওয়া গোলাপি রানী (২৮) বলেন, স্বামীর সংসার বাঁধার বয়স ১৪ বছর। এর মধ্যে বাড়ি ভাঙছি ৬ বার। এই ভাঙনের পর হামার কোন থাকার যায়গা নাই। বাচ্চা, শ্বশুর, শাশুড়ি, স্বামী কোথায় থাকমো তাও মোর জানা নাই। নাইলে বাপের বাড়ি যাওয়া নাইগবে।
করুন কান্তি রায় (৫৫) বলেন, যায়গা জমি যা ছিল সব শেষ। হামরা রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ামো, এছাড়া আর কোন উপায় নাই। বাড়ি ভাঙার পর এখন সরকার থাকি হামাক চাউল-ডাউল দিবে খাবার জন্য। হামার চাউল-ডাউল দরকার নাই। শুধু মিনতি করি, হামার তিস্তা তোমরা খুরি দ্যাও।
লালমনিরহাট তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শফিকুল ইসলাম কানু বলেন, তিস্তার অববাহিকায় ২ কোটি মানুষের জীবন রেখা। প্রতিবছর তিস্তার অববাহিকায় বিলীন হয়ে যায় হাজার কোটি টাকার সম্পদ। সরকারের কাছে আবেদন রংপুরে ২ কোটি মানুষের ভাগ্য যেখানে জড়িয়ে আছে। তাদের রক্ষার্থে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা জরুরি। শুনেছি ৩০ জুলাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ দিনের সফরে রংপুর আসবেন। আশা রাখছি এই দিনেই আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।