মোমেন আকন্দ, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি:
১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি তারিখ বগুড়া জেলার বাগমারিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। বিশিষ্ট রসায়নবিদ মনসুর রহমান ও জাহানারা খাতুনের দ্বিতীয় ছেলে তিনি।শিক্ষা জীবনে জিয়াউর রহমান ১৯৫২ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন এবং ১৯৫৩ সালে ডিজে কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক এ ভর্তি হন। একই বছর তিনি কাকুল মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন৷ ১৯৫৫ সালে কমিশন প্রাপ্ত হন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে। ১৯৫৭ সালে বদলি হন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৬৯ সালে উন্নিত হন মেজর পদে৷ তখন তিনি জয়দেবপুর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে পশ্চিম জার্মানি থেকে ট্রেনিং শেষ করে দেশে ফিরে নবগঠিত ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী যখন বাংলাদেশের নিরস্ত্র জনগণের উপর বর্বর অত্যাচার চালাচ্ছিল, যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাক বাহিনীর এক গ্রেফতার করে, ঠিক তখনই ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ তারিখে পরিস্থিতি বিবেচনায় চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মহান স্বাধীনতার ঘোষণা করেন শহীদ এই রাষ্ট্রপতি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তৎকালীন ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট এর মেজর জিয়াউর রহমান সশরীরে যুদ্ধ করেন। নেতৃত্ব দেন ১ম, ৩য় ও ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর সম্বন্ধে গঠিত জেড ফোর্সের। তিনি প্রথম ১ নং সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরে ১১ নং সেক্টর এর দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে মহান বীরত্তের খেতাব স্বরূপ মেজর জিয়াউর রহমানকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করেন বাংলাদেশ সরকার।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মেজর জিয়াউর রহমান উনার নিজ পেশা সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট তারিখে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর খন্দকার মোস্তাক আহমেদ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। একই বছর মেজর জিয়াউর রহমান চিপ অফ আর্মি স্টাফ হিসাবে পদোন্নতি পান। ৬ই নভেম্বর তারিখে খন্দকার মুশতাক আহমেদ কে ক্ষমতাচ্যুত করে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম। আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ক্ষমতা গ্রহণের পর মেজর জিয়াউর রহমানকে চিপ অফ আর্মি স্টাফ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এর নিজ বাসভবনে গৃহবন্দী করা হয়। সেনাবাহিনীর ভিতরে মেজর জিয়াউর রহমানের প্রচুর জনপ্রিয়তা থাকার কারণে সেনাবাহিনীর ভিতরে এই ঘটনার বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখার দেয়। এর ফলে আরেকটি পাল্টা অভ্যুত্থান সৃষ্টি হয় এবং মেজর জিয়াউর রহমানকে বের করে নিয়ে আসেন। মেজর জিয়াউর রহমান গৃহবন্দী থেকে মুক্ত হওয়ার পর তিনি চলে আসেন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে। ১৯ শে নভেম্বর ১৯৭৬ তারিখে জিয়াউর রহমানকে চিপ অফ আর্মি স্টাফ পদে ফিরিয়ে আনা হয় এবং উপ প্রধান সাময়িক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তখন তিনি খাল খনন সহ বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেন। গঠন করেন বাংলাদেশ মহিলা পুলিশ। একই বছর ২৯ নভেম্বর তারিখে তিনি প্রধান সাময়িক আইন প্রশাসক এর দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। গঠন করেন গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। ১৯৭৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তারিখে একুশে পদক প্রবর্তন করেন।একই বছরের একুশে এপ্রিল শপথ গ্রহণ করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে। প্রবর্তন করেন বহুদলীয় গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের আবাস দিয়ে তিনি বলেছিলেন I will make politics difficult for the politician.
১৯৭৮ সালের ৩রা জুন তারিখে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়। সেখানে দশ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিয়াউর রহমান জয়লাভ করেন। ঘোষণা করেন ১৯ দফা কর্মসূচির। তিনি জাতীয় ঐক্যের শক্তি হিসেবে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবর্তন করেন। রাজনৈতিক দল হিসেবে তিনি প্রথমে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) এবং পরে জাগদল ভেঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি গঠন করেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে তারিখে কতিপয় পথভ্রষ্ট সেনাবাহক কর্মকর্তাদের হাতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শহীদ হন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে দাফন করা হয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জানাজা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ জানাজা হিসেবে স্বীকৃত। প্রায় ২০ লক্ষাধিক মানুষ উনার জানাজায় অংশগ্রহণ করেন।