জুলহাস আহমেদ, বরগুনা:
বরগুনার বামনায় লাইসেন্স বিহীন সুন্দরবন হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিকস সেন্টারে প্রসুতি মৃত্যুর ঘটনার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক(অভিযোগ ও তদন্ত) মো.আশরাফুল আলম সহ ৩ সদস্যের একটি তদন্ত টীম ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। এসময় তারা নিহতের বাড়িতে যান এবং তাদের সকল প্রকার সহযোগিতার আশ^াস প্রদান করেন। তদন্ত টীমের অন্য সদস্যরা হলেন, উপ-পরিচালক এম. রবিউল ইসলাম ও বরগুনা সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ডা. মেহেদী হাসান।
বুধবার(২৪ জানুযারী) সকাল ১০টায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্তটীম বামনা উপজেলার গুদিঘাটা গ্রামের নিহত প্রসূতি মেঘলা আক্তারের বাবা ছগির হোসেন এর বাড়িতে যান এবং তাদের কাছে ঘটনার বিস্তারিত শোনেন। পরে নিহত প্রসূতি মেঘলা আক্তারের কবর জিয়ারত শেষে সুন্দরবন হসপিটাল এন্ড ডায়গনষ্টিক সেন্টারটি ঘুরে দেখেন এবং বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান ও বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আল ইমরান এর সাথে কথা বলেন।
এদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালকের কাছে নিহতের পরিবার অভিযোগ করেন, ক্লিনিকটির চেয়ারম্যানের দ্বায়িত্বে থাকা উপজেলার ডৌয়াতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মামলার আসামী হওয়ায় এবং তিনি গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে থাকার কারনে তাদেরকে বিভিন্ন সময় হুমকীর শিকার হতে হচ্ছে। তারা আরো অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান জেল থেকে বের হলে তাদেরকে এলাকা ছাড়া করা হবে বলেও হুমকীর সম্মুখীন হচ্ছেন। ফলে বর্তমানে তারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
এ ঘটনায় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক ও তদন্ত টীমের প্রধান মো. আশরাফুল আলম বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে অবহিত হয়ে ঘটনার সত্যতা উদঘাটন করতে বামনাতে এসেছি। আমরা যেটা পেয়েছি, অনুমোদনবিহীন এই ক্লিনিকে মেয়েটিকে এক অর্থে সিজারের নামে হত্যা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের এই বিশৃংখলায় আমরা মানবাধিকার কমিশন খুব উদ্বিগ্ন। আমরা এই ঘটনাটি তদন্ত করে বুঝতে চাই তাদের কোথায় অবহেলা ছিলো। এই মেয়েটির হত্যাকান্ডের সাথে যারা জড়িত আমরা চাই তাদের যেন আইনের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু বিচার হয়। এখানে আসার পরে দেখলাম এই পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে ভুক্তভোগিরা খুব শংকিত। তাদেরকে আসামী পক্ষরা বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি, হুমকী দিচ্ছে আমরা এটা নিয়েও উদ্বিগ্ন। এই পরিবারটি যাতে ন্যায় বিচার পায় এটা অবশ্যই রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের কমিশন সকল প্রকার সহযোগীতা এই পরিবারকে করবে।
জানাগেছে, গত ১৫ জানুয়ারি সোমবার রাতে লাইসেন্স বিহীন ডৌয়াতলা সুন্দরবন হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি ও তার গর্ভের সন্তানের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৮জন আসামীর সুন্দরবন হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেয়ারম্যান ও উপজেলা ডৌয়াতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমানকে পলাতক অবস্থায় শনিবার(২০জানুয়ারি) ভোর রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি বাসা থেকে আটক করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান(র্যাব-২) এর সদস্যরা। শনিবার বিকালে গ্রেপ্তারকৃতকে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান(র্যাব-২) এর ক্যাম্প থেকে বামনা থানা পুলিশ গ্রহণ করেন। রবিবার সকালে চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমানকে বরগুনা আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠায়।