এম জাফরান হারুন, পটুয়াখালী::
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার পূর্ব খাজুরবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসার প্রধান সুপার মোঃ আব্দুল মতিন কে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি সহ লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ভুক্তভোগী ও পরিবার সহ স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ভুক্তভোগী মাদ্রাসা সুপার মোঃ আব্দুল মতিন সরেজমিনে বলেন, আমি দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে পূর্ব খাজুরবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসার প্রধান সুপার নিয়োগ পেয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছি। ততকালীন মাদ্রাসার চিহ্নিত মতোন কোনো কিছু ছিল না। আমি ততকালীন সভাপতি ও কমিটির লোকজন সহ স্থানীয়দের সাথে নিয়ে সরকারের পাশাপাশি আমার পকেটের মোটা অংকের টাকা দিয়ে আজকে মাদ্রাসার মতোন মাদ্রাসা করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে একটি কুচক্রী মহল বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে আসছে।
সুপার বলেন, এরমধ্যে ২১ বছর পূর্বে একটি কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট সাজানো অভিযোগ দিয়ে সাময়িক বরখাস্ত করায়। এবং হয়রানি করার জন্য একটা মামলা দায়ের করে। পরে ওইসব অভিযোগ ও মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এবং আমি ঠিকঠাক আবার পুনরায় মাদ্রাসা প্রধান সুপারের দায়িত্ব পালন করে আসছি।
সুপার মোঃ আব্দুল মতিন বলেন, গত ২০২৩ সনে একটা অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার দায়িত্ব সহ সুপার কে দেই। তিনি পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরীক্ষা ফি মোট ৩২ হাজার টাকা আদায় করেন। পরীক্ষায় ১২ হাজার টাকার মতো খরচ করেন। অবশিষ্ট ১৯ হাজার ৯ শত ১৫ টাকা আমাকে না জানিয়ে তা অন্যান্য শিক্ষকদের নিয়ে ভাগবাটোয়ারা করে নেন। কিন্তু ভাগবাটোয়ারার আগে সহ সুপার কে একটি চিঠির মাধ্যমে টাকা গুলো প্রতিষ্ঠান একাউন্টে রাখার নির্দেশ দিলেও তা না শুনে ভাগবাটোয়ারা করে নেন। মুলত সেই থেকে সহ সুপার কে হাতিয়ার বানিয়ে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে আবার বিভিন্ন ষড়যন্ত্র সহ হয়রানি করে আসছে।
সুপার আরও বলেন, অভিভাবকদের না জানিয়ে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী ও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কুপরামর্শ সহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করানো হয়। যাহার দরুন আমি ইউএনও বশির গাজী স্যার সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেই। পরে গতকাল মঙ্গলবার ৩রা সেপ্টেম্বর-২৪ ইং বিকেলে ইউএনও স্যার আমাকে ও সহ সুপার সহ কমিটির লোকজনকে তার কার্যালয়ে ডেকে একটা মীমাংসা করে দেন।
সুপার মোঃ আব্দুল মতিন আরও বলেন, মীমাংসা করার পরে সাইদুল নামে একজন লোক হঠাৎ উপস্থিত হয়ে আজ থেকে ২৫ বছর আগে নাকি তার বোনের মার্কশীট নেওয়ার জন্য আমাকে ১৯ হাজার টাকা দিয়েছে। সেই টাকা ফেরত সহ বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে আমাকে লাঞ্ছিত করে। টাকার বিষয়টা সম্পূর্ণ আজগুবি মিথ্যা বানোয়াট। এখন আমার বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হওয়ায় পুনরায় আবার একটা ষড়যন্ত্রের পায়তারা চালাচ্ছে। আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে লাঞ্ছিত করার বিচার দাবি সহ সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ইউএনও স্যার সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিচার দাবি করছি।
নাম না বলা শর্তে কমিটির কিছু লোকজন সহ স্থানীয়রা জানান, সুপার দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মাদ্রাসা এক সময় তেমন কিছু ছিলনা। এখন তার প্রচেষ্টায় মাদ্রাসাটি মাদ্রাসায় রুপান্তরিত হয়েছে। তবে একেরপর এক বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চলছে তার বিরুদ্ধে। দ্রুত এর একটা সুরহা হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। নয়তো যে সুনামের সাথে চলছে মাদ্রাসাটি, তা অচিরেই অর্জন নষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে।
টাকার বিষয়ে সাইদুল নামে লোকটি মুঠোফোনে টাকা চাওয়ার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এব্যাপারে আমি ইউএনও স্যারের কাছে একটা লিখিত অভিযোগ দেই। সেই অভিযোগ পেয়ে ইউএনও স্যার আমাকে বলেন ‘ ওর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে আমি এব্যাপারে কিছু করতে পারবোনা। আপনি তারে যেভাবে হোক মাইরা ধইরা হলেও টাকা আদায় করেন। নাহয় তার বিরুদ্ধে মামলা করেন’।
এদিকে মুঠোফোনে সাইদুলের কাছে প্রতিবেদক টাকা দেওয়ার বিষয়ে কোনও প্রকার ডকুমেন্ট আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি (সাইদুল) বলেন, আমার কাছে কোনও ডকুমেন্ট নেই।
মাদ্রাসার বর্তমান সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ বশির গাজী বলেন, লাঞ্ছিত বা হুমকি ধামকির বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তবে সাইদুল নামে একজন লোকের কাছ থেকে প্রধান সুপারের বিরুদ্ধে ১৯ হাজার টাকা পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেহেতু এটা ফৌজদারি বিষয় তাই মামলা করার জন্য বলা হয়েছে। আর মাদ্রাসা যাতে ভালো থাকে এবং উভয় ভালো থাকতে পারে সেই ব্যাপারে মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।