তোফায়েল আহমেদ, ধামরাই প্রতিনিধি (ঢাকা)
ঢাকা জেলা ধামরাই থানার কুশুরা ইউনিয়নের অন্তর্গত আগ গাড়াইল গ্রামে হযরত শাহ নিশকিন বোগদাদী (রঃ)) ইসালে সওয়াব উপলক্ষে ৭১৭ তম ওরশ মোবারক এর পরিবর্তে ৫ দিনব্যাপী ওয়াজ নসিহত এর আয়োজন করায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় জনগণ এই প্রতিবেদককে জানায় ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ইং (বৃহস্পতিবার) প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ৫ দিন ব্যাপী ওরশ মোবারক উপলক্ষে বাউল গান ও মেলার প্রস্তুতি চলছিল। খবর পেয়ে ধামরাইয়ের উলামায়ে কেরাম এবং তৌহিদ জনতা হযরত শাহ নিসকিন বাগদাদী রহমাতুল্লাহ আলাইহির মাজার শরীফের পরিচালনা কমিটি ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে যোগাযোগ করেন, এবং প্রচলিত মাজারগুলোর বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন। ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতার ভাষ্যমতে মাজারের আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের শিশু বাচ্চাদের বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মাজারে এনে অন্নপ্রাশন (প্রথম খাবার) করা হয়। ওরশে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে নারী-পুরুষ শিল্পী দিয়ে রাতভর সংগীত পরিচালনা করা যা ইসলামে শরীয়ত বিরোধী এছাড়া মাজার কেন্দ্র করে নেশা দ্রব্য বিক্রয় ও সেবন করা, নারী-পুরুষের অবৈধ শারীরিক মেলামেশা করা হয়। যার ক্ষতিকর প্রভাব এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। মাজার কমিটির সভাপতি, জনাব আব্দুস সালাম ওলামায়ে কেরামের সাথে একমত পোষন করে চারটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। প্রথমত মাজারে সেজদা করা সম্পূর্ণ নিষেধ। মাজারের আশেপাশে যেকোনো ধরনের মাদকদ্রব্য সেবন ও বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষেধ। মাজারের আশেপাশে যেকোনো ধরনের বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষেধ। বাৎসরিক ওরশ ও বাউল গানের পরিবর্তে ৫ দিন ব্যাপী ওয়াজ নসিহতের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। উলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতা মাজার কমিটির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ওয়াজ নসিহত এর আয়োজন করা হয়। ৫ দিনব্যাপী স্থানীয় ও দেশ বরেণ্য ওলামায়ে কেরাম মুসলিম উম্মার হেদায়েতের জন্য নসিহত পেশ করেন। ধর্মপ্রাণ মুসল্লী ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তবারকের আয়োজন করা হয় ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ধামরাই উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি, আলহাজ্ব জনাব মোঃ তমিজ উদ্দিন। সভাপতিত্ব করেন, হাফেজ ক্বারী খোরশেদ আলম, হাফেজ মাওলানা আনোয়ার মুর্তজা, মাওলানা মোঃ ইলিয়াস, হাফেজ ওসমান গনি, জনাব আব্দুস সালাম, মাহফিল পরিচালনা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন, হযরত মাওলানা মাজহারুল ইসলাম, মুফতি ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, হাফেজ সাইফুল ইসলাম, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, হাফেজ আল আমিন, মাওলানা সাইফুল ইসলাম, ডাক্তার আব্দুল হালিম, মোহাম্মদ জানে আলম, মোঃ হুমায়ূন কবির
উল্লেখ্য, হযরত শাহ নিশকিন বাগদাদী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) ছিলেন একজন প্রখ্যাত সুফি সাধক, যিনি ইসলামের প্রচার ও তাসাউফের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশের মধ্যে একটি হলো বাংলাদেশে তাঁর আগমন এবং ইসলামের প্রচারে তাঁর অসাধারণ অবদান।হযরত শাহ নিশকিন বাগদাদী (রহ.) মূলত বাগদাদ থেকে আগমন করেন। ধারণা করা হয় যে, তিনি ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রচারের উদ্দেশ্যে উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ভ্রমণ করেছিলেন। তাঁর এ সফরের সময় তিনি বাংলায় আসেন, যা ছিল ইসলাম প্রচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র।
তাঁর আগমনকাল ছিল এমন সময়ে যখন বাংলা হিন্দু ও বৌদ্ধ প্রভাবিত অঞ্চলে পরিণত হয়েছিল এবং ইসলাম তখনো প্রভাবশালী হয়ে ওঠেনি। হযরত শাহ নিশকিন বাগদাদী (রহ.) তাসাউফের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা এবং সৎ জীবনযাপনের শিক্ষা দিতেন। তাঁর জীবনযাপন ও আধ্যাত্মিক শক্তি মানুষকে মুগ্ধ করত।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁর স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। বিশেষত তাঁর মাজারগুলো সুফি সাধকদের প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার নিদর্শন। এগুলো আজও মানুষের কাছে তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচিত হয়।
হযরত শাহ নিশকিন বাগদাদী (রহ.) বাংলাদেশের ইসলামী ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল নাম। তাঁর প্রচেষ্টা ও আধ্যাত্মিক শক্তি বাংলার সমাজে ইসলামের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি শুধু একজন ধর্মপ্রচারক ছিলেন না; বরং তিনি ছিলেন মানবতার এক মহান সেবক।