এম জাফরান হারুন::
পুলিশ জানান, ঘটনার দিন গত শুক্রবার (৩রা জানুয়ারী) রাত অনুমান ১০:১০ টা থেকে রাত অনুমান ১০:২৫ টা পর্যন্ত বাউফলের কালাইয়া ইউপির কালাইয়া বন্দরের মার্চেন্ট পট্টিতে ভিকটিম ব্যবসায়ী শিবানন্দ রায় শিবু বণিক (৭৬) এর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কানু প্রিয় ভান্ডারে অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন ডাকাত পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মুখমন্ডলে মানকি টুপি পড়া অবস্থায় হাতে রামদা, চাইনিজ কুঠার, পিস্তল সহ অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে ভিতরে ঢুকে শিবানন্দ রায় শিবু বনিকের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হাত ধরে রাখে এবং কর্মচারী তাপস মহেষ ও শংকর দাসের গলায় রামদা ধরে লাইলনের দড়ি দিয়ে হাত-পা বেধে মুখে স্কসটেপ পেচিয়ে দোকানের ভিতরে ও সামনে থাকা সকল সিসি ক্যামেরা ভেঙ্গে শিবানন্দ রায় শিবু বণিক এর দোকানের ক্যাশ বক্সের ভিতরে থাকা মালামাল বিক্রয়ের নগদ বিভিন্ন নোটের অনুমান পাচঁ লক্ষ টাকা ডাকাতি করে নিয়ে সকল অজ্ঞাতনামা ডাকাতরা একে অপরের সহযোগীতায় শিবানন্দ রায় শিবু বণিক কে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে শিবানন্দ রায় শিবু বনিকের স্ত্রী বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাউফল থানার মামলা নং-১, তারিখ-০৪/০১/২০২৪ খ্রিঃ, ধারা-৩৯৫/৩৯৭/৩৬৪ পেনাল কোড রুজু করা হয়।
ডাকাতি ও অপহরনের ঘটনার পরপরই পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর সার্কেল মোঃ সাজেদুল ইসলাম সজল ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, বাউফল সার্কেলের আরিফ মুহাম্মদ শাকুরের নেতৃত্বে ঘটনাস্থল পরিদর্শন পূর্বক বেশ কয়েকটি টিম মাঠে নেমে কালাইয়া ইউপির কালাইয়া বাজারের বিভিন্ন স্থান হইতে সিসি টিভির ফুটেজ সংগ্রহ পূর্বক বিশ্লেষন করে ভিকটিমকে উদ্ধারসহ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তৎপর হয়। অবশেষে বাউফল থানা ও জেলা গোয়েন্দা শাখা, পটুয়াখালীর একাধিক চৌকস অভিযানিক দল বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাতি ও অপহরনের মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য বাউফল থানা এলাকায় গত ইং ০৩/০১/২০২৫ তারিখ রাত অনুমান ১০.২৫ ঘটিকা হইতে ইং ০৬/০১/২০২৫ তারিখ ০০.৪৫ ঘটিকায় নিরবিচ্ছিন্ন অভিযান পরিচালনা করে কালাইয়া বন্দরের চাঞ্চল্যকর ডাকাতিসহ অপহরন ঘটনার ভিকটিম শিবানন্দ রায় বণিক (৭৬) কে উদ্ধারপূর্বক ৫ অপহরনকারী কে আটক করতে সক্ষম হয়।
আটককৃতরা হলো–১। মোঃ মাসুদ শরীফ (২৪), পিতা-মোঃ আকবর শরীফ, মাতা- মাকসুদা বেগম, সাং-বালিগোনা ৭নং ওয়ার্ড, থানা- ঝালকাঠি সদর, ২। মোঃ মিরাজ মৃধা (২০), পিতা-মোঃ মিন্টু মৃধা, মাতা- মিনারা বেগম, ৩। মোঃ জহির প্যাদা (২৭), পিতা-মোঃ বাবুল প্যাদা, মাতা-রেনু বেগম, ৪। বিধান চন্দ্র মিস্ত্রী (২২), পিতা- গকুল চন্দ্র ওরফে কালু মিস্ত্রী, মাতা- উত্তরা রানী, সর্ব সাং- বড় ডালিমা ৮নং ওয়ার্ড, ইউপি- নাজিরপুর, থানা- বাউফল, ৫। মোঃ মাহফুজ (১৬), পিতা-মোঃ জাকির সিকদার, মাতা- কহিনুর বেগম, সাং- চর পাচুকিয়া ৪নং ওয়ার্ড, থানা- দক্ষিণ আইচা ভোলা।
পুলিশ আরও জানান, ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত দেশীয় কিছু অস্ত্র-সস্ত্র সহ লুন্ঠিত নগদ এক লক্ষ পয়ত্রিশ হাজার ছয়শত আশি টাকা উদ্ধার করা হয়। ১নং আসামী মোঃ মাসুদ শরীফ ফ্রেস কোম্পানীতে এসআর হিসাবে চাকুরী করে। সেই সুবাদে ভিকটিম শিবানন্দ রায় শিবু বণিকের ব্যবসায়ীক লেনদেনের বিষয় সম্পর্কে অবগত থাকায় ডাকাত ও অপহরনকারী দলের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে ঘটনার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মাফিক ডাকাত ও অপহরনকারীরা এবিষয়ে মাসুদ শরীফ এর বাসায় একাধিক বৈঠক করে কর্মপরিকল্পনা করে দায়িত্ব বন্টন করে।
পুলিশ জানান, ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী পলাতক আসামী ডাকাতি কাজের সময়ে ব্যবহৃত জ্যাকেট, জুতা, মাক্স, মানকি ক্যাপ ঢাকা থেকে সংগ্রহ করে এবং ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত নৌকা চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন থেকে ভাড়া করে। ঘটনার দিন ইং ০৩/০১/২০২৫ তারিখ রাত অনুমান ০৯.০০ ঘটিকার দিকে তেতুলিয়া নদীর মোহনা হতে নৌকা করে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে কাছাকাছি অবস্থান নেয়। শুক্রুবার দিন বাজার বন্ধ এবং ক্রেতা সমাগম না থাকার সুযোগে তারা পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক ডাকাত সদস্যরা শিবানন্দ রায় শিবু বনিক কে অপহরন করে তেতুলিয়া নদীর দিকে নিয়ে চলে যায়। এবং একটি চরে নির্জন পরিত্যক্ত বাসায় দুইদিন আটকে রেখে ভিকটিমের পরিবারের কাছে এক কোটি টাকা মুক্তিপন দাবী করে। এইরুপ চাঞ্চল্যকর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাউফল থানা পুলিশ দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনের মাধ্যমে ৪৮ ঘটনার ভিতরে ভিকটিমকে বাউফলের নাজিরপুরের বড় ডালিমার কচুয়া এলাকা থেকে সম্পূর্ন অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার পূর্বক ৫ জন অপহরনকারীকে গ্রেফতার করে।