টাঙ্গাইল (মির্জাপুর) প্রতিনিধি
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে ডেন্টাল কেয়ার। অনুমোদিত চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের কোনো সনদ না নিয়েই নিজের ইচ্ছামতো নামের আগে বড় বড় ডিগ্রী ব্যবহার করে দাঁতের চিকিৎসালয় খুলে বসেছেন তারা। হাটে বাজারে ওষুধ বিক্রি ও দন্ত বাধাই করে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ইলিয়াস সিকদার নামের কথিত চিকিৎসক উপজেলার উয়ার্শী ইউনিয়ন এর ভাদগ্রাম বাজারে সোহান দন্ত চিকিৎসালয়। ভাওড়া ইউনিয়নের নয়াপাড়া ভাওড়া বাজারে অনু ডেন্টাল কেয়ার।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়,সোহান দন্ত চিকিৎসালয়ের মালিক কয়েকবছর পূর্বে হাট বাজারে ওষুধ বিক্রি করতেন ইলিয়াস সিকদার। এদিকে অনু ডেন্টাল কেয়ার এর মালিক উত্তম সরকারের রয়েছে দীর্ঘদিন এর অভিজ্ঞতা। সে’সব অভিজ্ঞতা কে কাজে লাগিয়েই করেছেন চেম্বার খুলে নিয়েছেন ভিন্ন নামে দন্ত চিকিৎসালয়।
সরেজমিনে চিকিৎসালয় ঘুরে দেখা যায়, দাঁতের ফিলিং, স্কেলিং, লাইট কিউর, ফিলিং ক্যাপ, দাঁত ওঠানো, দাঁত বাঁধানোর সব কাজই করা হচ্ছে। বিভিন্ন কাজে রোগীদের কাছ থেকে এক হাজার থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছেন । এদের মধ্যে কারও নেই কোনো ডিগ্রী, এছাড়া ডাক্তারি সনদপত্রও দেখাতেও পারেননি তারা।
ইলিয়াস সিকদার এর সাথে এবিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি চড়াও ভাবে কথা বলেন, আমি কাউকে মার্ডার করিনি, রিপোর্ট করার জন্য আপনারা আসবেন। আপনারা আইনের লোক না যে আপনাদের সব কিছু বলতে হবে। রিপোর্ট করতে হলে হারতাল অবরোধ মারামারি এগুলো করবেন এখানে আসার কিছু নেই। ডিগ্রী এবং সনদ আছে কিনা এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান অভিজ্ঞতা না থাকলে হয় না, দন্ত চিকিৎসা করতে অভিজ্ঞতায় হচ্ছে বড় কিছু সনদের প্রয়োজন নেই।
এছাড়াও ডা. উত্তর সরকার বলেন, চিকিৎসা করতে ডিগ্রি সার্টিফিকেট লাগে না। চেম্বারের কথা জানলে চাইলে জানান, যে কয়দিনই হোক করতেছি বিডিএস আমার সাথেই আছে। বিডিএস আমার আংকেলের আছে এটা দিয়েই হয়। কিন্তু তার নামের আগে নামকরণ লাগিয়েছেন ভি. ডা. উত্তম সরকার।
বিডিএস প্রাপ্ত ডা. ফজলে রাব্বি বলেন, যেভাবে হাট বাজারে গড়ে উঠেছে ডাক্তার এদের জন্য আমাদের সমস্যাই হচ্ছে। আবার দেখা যায় কেউ পড়ালেখা না করেই হাতের কাজেই করে নিয়েছে বিভিন্ন নামে ডেন্টাল কেয়ার।
মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদুর রহমান জানান, আমরা তথ্য পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) অনুমোদন ছাড়া কেউ নামের আগে বা পরে ডাক্তার বা উচ্চতর ডিগ্রি বিষয়ে কোনোও কিছুই ব্যবহার করতে পারবে না বলে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। এছাড়া নিবন্ধিত চিকিৎসক বা দন্ত চিকিৎসকদের তাদের সাইনবোর্ডে, প্রেসক্রিপশন প্যাড বা ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদিতে পিজিটি, বিএইচএস, এফসিপিএস (পার্ট-১ ও পার্ট-২ ), এমডি (ইন কোর্স), (পার্ট-১), (পার্ট-২), (থিসিস পর্ব), (শেষ পর্ব), কোর্স কমপ্লিটেড (সিসি), এমএস (ইন কোর্স) ইত্যাদি এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া ফেলোশিপ এবং প্রশিক্ষণ, যেমন এফআরসিপি, এফআরএইচএস, এফআইসিএ, এফআইসিএস, এফএএমএস, এফআইএজিপি ইত্যাদি উল্লেখ না করার জন্য নির্দেশ দেন আদালত। কারণ, এগুলো বিএমডিসি স্বীকৃত নয়।