নিজস্ব প্রতিবেদক:
★হোটেল ক্লিনার থেকে কোটিপতি মারুফ !
মিরপুরে দেহ ব্যবসায়ী ও মানব পাচার চক্রের মূল হোতা ও মাস্টার মাইন্ড মারুফ। হোটেল নিউ লন্ডন প্যালেস আবাসিকের কর্ণধার তিনি। তার তত্ত্বাবধায়নে এই আবাসিক হোটেলে নিয়মিত চলে অসামাজিক কার্যকলাপ। আবাসিক হোটেলে দেহ ব্যবসা ও মাদক সাপ্লাই দিয়ে হয়েছেন কোটিপতি। অবৈধ টাকার জোরে নিয়ম নীতির কোন তোয়াক্কাই করে না মারুফ । প্রকাশ্যেই বলে বেড়ায় থানা পুলিশ, সাংবাদিক তার পকেটে থাকে। দীর্ঘদিন যাবৎ হোটেল নিউ লন্ডন প্যালেসে নারী দিয়ে দেহব্যবসা, মাদক সরবরাহ, নিরাপদে মাদক সেবন, মাদক ক্রয়-বিক্রয়সহ নানা অনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়েছেন হরহামেশা । অভিযোগ রয়েছে হোটেলটিতে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মেয়েসহ মডেলখ্যাত তারকাদের দিয়ে দেহ ব্যবসা চালানো হয়। এছাড়া মারুফ মানবপাচার সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত নামলেই হোটেলের বিভিন্ন কামরায় বসে মাদকের জমজমাট আসর। হোটেল স্টাফরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মরণ নেশা ইয়াবা, মদ, ফেন্সিডিল সরবরাহ দিয়ে থাকে। রাতভর মদ, ইয়াবা, গাঁজা সেবন ও নারীসঙ্গ নিয়ে রঙ্গলীলায় মেতে থাকেন খদ্দেররা। কিছুদিন পূর্বে আনন্দ টেলিভিশনের সাংবাদিক ইমন, এই আবাসিক হোটেলে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তার সাথে সন্ত্রাসি স্টাইলে চরম দুর্ব্যবহার করে মারুফসহ তার হোটেলের বিভিন্ন স্টাফরা। সাংবাদিক ঈমনের বিরুদ্ধে আনা হয় চাঁদাবাজির অভিযোগ। পরবর্তীতে বিষয়টি শাহ্ আলী থানা কর্তৃক তদন্ত সাপেক্ষে মিথ্যা প্রমাণিত হলে মারুফ ও হোটেল স্টাপদের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলা হয়। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে পূর্বের ন্যায় আবারও এই আবাসিক হোটেলেই শুরু করে রমরমা দেহ ব্যবসা মাদক বানিজ্য। গত শুক্রবার আনুমানিক সময় সন্ধ্যা ৭. ৩০ মিনিটে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার অন্তত ৬ থেকে ৭ জন সাংবাদিক হোটেল নিউ লন্ডন প্যালেস আবাসিক মিরপুর ১, রবিউল প্লাজার নবম তলায় উপস্থিত হয়। সাংবাদিকদের দেখেই তালে বেগুনে জ্বলে ওঠেন হোটেল ম্যানেজার আতিক। সাংবাদিকদের কাছে তথ্য ছিলো এই হোটেলের ৯২০ নম্বর রুমে ৬-৭ জন মেয়েদের আটকে রেখে তাদের দিয়ে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসা করায় হোটেল মালিক মারুফ হায়দার এবং ম্যানেজার আতিক। এই বিষয়ে ম্যানেজার আতিকের কাছে বিস্তারিত জানতে চাইলে শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। পরে জাতীয় দৈনিক অর্থনীতি পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার ইস্রাফিল শাহ্ আলী থানার অফিসার ইনচার্জ মওদুদ হাওলাদার’কে ফোন করে বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনের সহযোগিতা চাইলে তাৎক্ষণাৎ শাহ্ আলী থানার একটি টিম উপস্থিত হয় হোটেল নিউ লন্ডন প্যালেস আবাসিকে। উক্ত ঘটনায় হোটেলে পুলিশ উপস্থিত হলে বাধে আরও বিপত্তি। অবৈধ টাকার জোরে প্রভাবশালী মারুফ বিভিন্ন মহলে শুরু করে দৌড়ঝাপ, হোটেল থেকে সাংবাদিক ও পুলিশ সরিয়ে নিতে তদবির শুরু করে। তবে সাংবাদিকরা ছিলো নাছোড়বান্দা। উপস্থিত সাংবাদিকরা জোর গলায় বিষয়টি তদন্তের দাবী জানালে, আলী থানার অপারেশন ইন্সপেক্টর হাবিবুর রহমানের দিক নির্দেশনায় গত শুক্রবার রাত দিকে রবিউল প্লাজার নবম তলায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে হোটেলের ৯২০ নম্বর রুম থেকে উদ্ধার করা হয় চারজন যৌন কর্মী। অভিযানে নেতৃত্ব দেন শাহআলী থানার উপ- পরিদর্শক (এসআই) ফারুক হোসেন ও (এএসআই) রাশেদ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন,হোটেল স্টাফ সাইদ (৪০) আফরিন (৩০) রিয়া মনি (২২) মোসাঃ তমা ইসলাম (৩৪) মোসাঃ তানিসা আক্তার (২৪) মোছাঃ রুমা আক্তার (৩২)। কিন্তু প্রভাবশালী মারুফ তার অবৈধ টাকার ক্ষমতায় ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখতে সক্ষম হয়, হোটেল ম্যানেজার আতিক সহ অন্যান্য স্টাফদের। পরবর্তীতে গত শনিবার ৫ জনের বিরুদ্ধে ডিএমপি এ্যাক্ট আইনে মামলা দিয়ে কোর্টে প্রেরণ করা হয়। এ বিষয়ে শাহ্ আলী থানার অফিসার ইনচার্জ মওদুদ হাওলাদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আবাসিক হোটেল গুলোতে অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে নিয়মিত আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত তাদেরকেও গ্রেফতার করা হবে।
যেভাবে হোটেল ক্লিনার থেকে কোটিপতি মারুফ!!!
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিরপুরের পুরোনো এক হোটেল ব্যবসায়ী বলেন, মারুফ এক সময়ে রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীর নামকরা (আবাসিক) হোটেল ব্যবসায়ী রাজিব বাবুর হোটেলে ক্লিনারের কাজ করতেন। আবাসিক হোটেলে কাজ করার সুবাদেই বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের সাথে পরিচিতি শুরু হয় মারুফের। ধীরে ধীরে সখ্যতা হয় মাদক সিন্ডিকেটের সাথে। ক্লিনার ও রুম সার্ভিসের পাশাপাশি মাদক সরবরাহ দিতে শুরু করে মারুফ । এভাবেই শুরু হয় মারুফের উত্থান। মাদক সরবরাহের কাচা টাকার গন্ধে বেড়ে যায় মারুফের দৌরাত্ব। এরপরে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলের ব্যবসায়িক পার্টনার হিসেবে শুরু হয় মারুফের বেপরোয়া জীবন যাপন। মিরপুরে দারুস সালাম থানার আওতাধীন হোটেল হোয়াইট ব্রিজ (আবাসিক) রাশেদ জামান নামের আরেক হোটেল ব্যবসায়ীর সাথে পার্টনারে শুরু করে আবাসিক হোটেল ব্যবসার অন্তরালে মাদক বানিজ্য ও রমরমা দেহ ব্যবসা। বর্তমানেও হোটেল হোয়াইট ব্রিজের ব্যবসায়ী পার্টনার এই মারুফ এবং হোটেল নিউ লন্ডন প্যালেস (আবাসিক) ও হোটেল গোল্ডেন/যমুনা আবাসিকের একছত্র অধিপতি এই মারুফ ।
এছাড়া শেওড়াপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনের পাশে হোটেল গোল্ডেন/যমুনা আবাসিক পরিচালনা হয় মারুফের ছাত্র ছায়ায়। সেখানে মাদকাসক্ত আরিফ ও ডিপজল নামের দুই সহকর্মীদের দিয়ে একইভাবে চালিয়ে যাচ্ছে মাদক বাণিজ্যসহ রমরমা দেহ ব্যবসা। গুঞ্জন রয়েছে মিরপুরে হোটেল নিউ লন্ডন প্যালেস ও হোটেল হোয়াইট ব্রিজে ইয়াবা সরবরাহ করে থাকেন শেওড়াপাড়ায় হোটেল গোল্ডেন/যমুনা আবাসিকের দায়িত্বে থাকা আরিফ নিজেই। মারুফ এখন সমাজের বিষফোঁড়া। মাদক সরবরাহ ও দেহ ব্যবসার মাধ্যমে দেশের যুব সমাজকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিতে এমন অসংখ্য মারুফরা পালন করে গুরুদায়িত্ব।