বরগুনা সংবাদদাতাঃ
মামলা-হামলা, শঠতা ও প্রতারণার ফাঁদে ফেলে শূন্য থেকে কোটি কোটি টাকার বিত্তবৈভবের মালিক হওয়া বরগুনার ২নং গৌরীচন্না ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য সুজন সরকার (দুখিরাম) এর আয়ের উৎস তদন্তের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এলাকার ভুক্তভোগীরা।
শনিবার (২২ জুন)বেলা ১১টায় এলাকাবাসীর পক্ষে সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের ভুতমারা গ্রামের মৃত লোকনাথ চন্দ্র বিশ্বাসের পুত্র ভুক্তভোগী বিপ্লব চন্দ্র বিশ্বাস বরগুনা প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন করেন।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী বিপ্লব চন্দ্র বিশ্বাস জানান, আমার বোনপুত্র সুজন সরকার (দুখিরাম) ৩ মাস বয়সে মা হারা হলে গৌরীচন্না ইউনিয়নের ভুতমারা গ্রামের আমাদের বসতবাড়িতে লালিতপালিত হয়। ভরণপোষণ, লেখাপড়া ও যাবতীয় খরচ আমরা তিন ভাই শ্রমিক ও দিনমজুরের কাজ করে বহন করে থাকি। বসবাসের জন্য একখানা দানপত্র দলিলের মাধ্যমে ০৯ শতাংশ জমি দান করি। ২নং গৌরীচন্না ইউপি নির্বাচনে সুজন সরকার (দুখিরাম) মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গেলে সেখানে আমরা তিন ভাই মিলে ৭ লক্ষ টাকা নির্বাচনী খরচ বহন করি। পালিয়ে বিয়ে করার কারণে ঘটনায় জেলে গেলে অভিভাবক হিসেবে জামিনে মুক্ত করে চার লাখ টাকা খরচ করে বিবাহ কার্য সম্পাদন করি। ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়ে আমাদের দেয়া সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেও আমাদের বিরুদ্ধে ভিতরে ভিতরে নানান ধরনের ষড়যন্ত্র করতে শুরু করে।
বিগত দিনে সুজন সরকার (দুখিরাম) এর পিছনে খরচ করার সমুদয় টাকা দাবি করলে তারা স্বামী-স্ত্রী আমাদের পাওনা টাকা পরিশোধ করার অঙ্গীরকার করেও তালবাহানা শুরু করে। ২০০৫ সালে দুখিরাম ও তার স্ত্রী অর্পিতা মনি সাথী ৭ লক্ষ ও ৪ লক্ষ মোট ১১ লক্ষ টাকা ১৫০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নিজ নিজ নাম স্বাক্ষর করে টাকা এক বছরের মধ্যে পরিশোধ করবে বলিয়া লিখিত দেয়। সুজন সরকার দুখিরাম ও আমি শতাংশ ৯০ হাজার টাকা দরে মোট ৯৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকার বায়নাপত্রে আবদ্ধ হলে আমি আমার পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে ৯ লক্ষ টাকা সুজন সরকারকে নগদ প্রদান করি। এমতাবস্থায় আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে সুজন সরকার দুখিরাম আমাকে তিনভাগের এক ভাগ জমি দিবে বলে তার মূল্য বাবদ নয় লক্ষ টাকা বাকি ২৩ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা এবং কবলা দলিল রেজিস্ট্রি বাবদ ৫ লক্ষ ৭৬ হাজার মোট ৩৮ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা দাবী করে। বায়না দেয়া ৯ লক্ষ টাকা বাদে ২৯ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা ২০২৪ সালের জুন মাসের ৬ তারিখের মধ্যে দিতে হবে নইলে পিছনের বায়নাকৃত সকল টাকা বাজেয়াপ্ত হবে বলে জানায়। আমি নিরুপায় হয়ে আমার পৈতৃক সম্পত্তি ও কবলাকৃত সম্পত্তি সর্বনিম্ন দরে বিক্রি করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ২৯ লাখ ১৬ হাজার টাকা নগদ প্রদান করি। টাকা প্রদানের কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর সুজন সরকার দুখিরামের অসততামি ও মিথ্যা প্রবঞ্চনা শুরু করে দেয়।দলিল রেজিস্ট্রি করা বাবদ মোট ৩৮ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে আমার নামে সাফ কবলা দলিল না করে বিভিন্ন লোকের নামে দলিল দিয়ে আমার টাকা আত্মসাৎ পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি না করে আমাদের দানপত্র হিসেবে দেয়া নয় শতাংশ জমি ও বসত ঘর গোপনে বিক্রি করে নির্বাচনী খরচ চালান।
সুজন সরকার দুখিরাম মেম্বার থাকা অবস্থায় আমাদের দখলীয় সম্পত্তি হতে সুবল বিশ্বাস, রঞ্জিত বিশ্বাস, নিখিল, বাদল, নিরঞ্জন, সুকুমার, রত্নেশ্বর, সুষেন ও সুশান্তর নিকট গোপনে ৯ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। আমাদের জমি পরিমাপ করতে গিয়ে জমির সকল কাগজপত্র হিসাব নিকাশ করে দেখা যায় ইটভাটা মালিক সুভাষ ঘোষের দখলের মধ্যে ২২ শতাংশ জমি বিক্রিত আছে এবং সুবল বিশ্বাসগং এর মধ্যে দখলের প্রাপ্ত জমির চেয়ে অনেক বেশি জমি আছে।সুজন সরকার দুখিরাম আমাদের দাবি কৃত সাড়ে ২৩ শতাংশ জমি তার নামে বায়না রেজিস্ট্রি করে নেন যেখানে যার মূল্য আসে ২১ লক্ষ টাকা। দুঃখী রাম আমাদের ওয়ারিশগণকে মাত্র দেড় লক্ষ টাকা বুঝিয়ে দেন কিন্তু সুকৌশলে দেড় লক্ষ টাকার পরিবর্তে সাড়ে সাত লক্ষ টাকা নগদ গ্রহণ দেখিয়ে মোক্তারের যোগসাজসে লিখে ২০১১ সালের পহেলা নভেম্বর তারিখ বায়না রেজিস্ট্রি করেন। বায়না পত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্বেই আমরা জমি দাতাগণ জমি সাফ কবলা রেজিস্ট্রি করিয়া নিতে তাগিদ দিলে গড়িমসি করে। পূর্বের পাওনা ৪৯ লাখ ১৬ হাজার টাকা সুজন সরকার দুখিরামের কাছে চাওয়া হয় এবং ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়া বায়নাকৃত জমি নিবেনা বলে উক্ত সভায় অনিহা প্রকাশ করে এবং এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা তাকে ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। আমার পাওনা ৪৯ লাখ ১৬ হাজার টাকা পরিশোধ করতে বললে বিভিন্ন অজুহাত দিতে থাকে। একটি কুচক্রিমহলের সহযোগিতায় ১৮ সালে আমার বসতঘর, দখলীয় জমি দখলের জন্য রাতের অন্ধকারে রামদা , ছেনা, লাঠি সোটা অন্যান্য অবৈধ অস্ত্রসহ সজ্জিত হয়ে আমার উপর আক্রমণ চালায়। আক্রমণকারীরা আমার বসত ঘর লুটপাট করে স্বর্ণালংকার, টিভি, মোবাইল, দলিলপত্র, রেকর্ড পরচা, মামলার নথি এমনকি আলমারি ভেঙ্গে আমার চেকের পাতা ও নতুন চেক বই এবং নগদ দেড় লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আমার ঘটনার ন্যায় গৌতম চন্দ্র সহ এলাকার অনেকেই নিজ নামীয় কবলাকৃত সম্পত্তি সুজন সরকার দুখিরাম আটকিয়ে দখল করিয়ে রাখে। অনেকেই তার কাছে চরম হয়রানির শিকার।
তিনি আরো জানান, বরগুনা শহরের বিশিষ্ট ফল ব্যবসায়ী গৌতম চন্দ্র ব্যাংকের চেক গচ্ছিত রেখে বরগুনা উপজেরা ভূমি অফিসের চার চাকুরীরত প্রতাপ চন্দ্র মুতাই এর কাজ থেকে দুইখানা চেক ছয় খানা নন জুডিশিয়াল স্টাম্প রেখে এক লক্ষ টাকা নগদ গ্রহণ করেন। কিছু দিন অতিবাহিত হওয়ার পর সুজন সরকার (দুখিরাম) ও তার স্ত্রী অর্পিতা মনি সাথীর খালু শ্যামল মাতুব্বর এর তত্ত্বাবধানে প্রতাব চন্দ্র মুতাই এর কাছ হইতে ২খানা চেক ও ৬খানা নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প মোটা অংকের টাকা দিয়ে ক্রয় করে নিয়ে সুজন সরকার (দুখিরাম) ২৪ শতাংশ জমির বায়না লিখে বায়না পত্র ও ১টি চেক দিয়া গৌতম চন্দ্র (ফল) এর বিরুদ্ধে পঞ্চান্ন লক্ষ টাকার একটি মামলা দায়ের করেন। বাকী একখানা চেক ও ৩খানা ষ্ট্যাম্প দিয়া সুজন সরকার (দুখিরাম) জনৈক সফিকুর রহমান ফারুককে বাদী বানিয়ে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলার দাবী উনিত্রিশ লক্ষ টাকা। যাহার উদ্দেশ্য গৌতম চন্দ্র (ফল) এর ২৪ শতাংশ জমি দখল করা এবং আটকাইয়া দলিল নেওয়া।
সুজন সরকার (দুখিরাম) ও তার স্ত্রী অর্পিতা মনি সাথী আমার মত অনেকের অবৈধভাবে অর্থ আত্মসাত, অন্যায়ভাবে জমি দখল, মামলার মাধ্যমে হয়রানি, চেক স্ট্যাম্পের মাধ্যমে জালিয়াতি করে দিগুন দামে রক্ষিত করা, জাল জালিয়াতি দলিল করা, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির করা, মানুষের ধার পাওনা মিথ্যা দাবী করিয়া নিরহ মানুষকে জেল হাজত খাটনো, মানুষের মিথ্যা বায়না দেখাইয়া জমি দাবী করেন। সুজন সরকার (দুখিরাম) ও তার স্ত্রী অর্পিতা মনি সাথী লাকুরতলা মহাসড়ক সংলগ্ন দাবীকৃত দখলীয় ৬৯ শতাংশ জমি মূল্য পাঁচ কোটি বায়ান্ন লক্ষ টাকা ও ৩টি মামলায় দাবীকৃত নগদ ক্যাশ এক কোটি বত্রিশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা এবং লাকুরতলা মহাসড়কের রড, সিমেন্ট ও বালুর দোকানের চালান ত্রিশ লক্ষ টাকা এবং ভুতমারা খরিদকৃত জমির দাবী ১.৩৬ শতাংশ যাহার মূল্য বাবদ চার কোটি আট লক্ষ টাকা বিগত ৪টি ইউপি নির্বাচন পরিচালনার আনুমানিক ব্যয় পঁয়ত্রিশ লক্ষ টাকা, সর্ব মোট এগার কোটি বাইশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা। বর্তমানে সুজন সরকার (দুখিরাম) ও তার স্ত্রী অর্পিতা মনি সাথী বিত্তবৈভবের মালিক। কিন্তু তাদের কোন আয়ের উৎস নাই। হঠাৎ শুন্য থেকে এত টাকার মালিক কি ভাবে হলো? রড সিমেন্ট এর ব্যবসা মাত্র ২বছর হয় চালু করেছেন। ইহা খতিয়ে দেখার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পুলিশ সুপার মহোদয় বরগুনা, গোয়েন্দা শাখা বরগুনা, সিআইডি শাখা বরগুনা, সদর থানা বরগুনা এবং জন প্রশাসন মন্ত্রনালয় এর অধীনে জেলা প্রশাসক মহোদয় বরগুনা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরগুনা, উপজেলা ভূমি অফিস বরগুনা, ২নং গৌরীচন্না ইউপি চেয়ারম্যানকে অনুসন্ধান করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানান। এবং উল্লেখিত সম্পত্তির আয়কর সহ সকল রাজস্ব আয় থেকে সরকারকে বঞ্চিত করেছেন কি না তা রাজস্ব বিভাগকে তদন্তের অনুরোধসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবী জানান।